ব্যাংক থেকে প্রচুর অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেছেন, ‘যারা অর্থ পাচার করেছে তাদের কিছু সম্পদ দেশে আছে। দেশ ও বিদেশ দুই চ্যানেলে যেভাবেই হোক সম্পদগুলো পুনরুদ্ধার করার চেষ্টা করব।’ গতকাল বৃহস্পতিবার গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘এরই মধ্যে অ্যাসেট রিকভারি ইনস্টিটিউশন গঠনের চেষ্টা করছি। সেখান থেকে যে টাকাটা আসবে সেটা দিয়ে আমরা ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করব। হয়তো সব টাকা ফেরত পাব না। ১০০ টাকার মধ্যে ৫০ টাকা পাব।
ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, ‘এখন আমাদের প্রধান কাজ ব্যাংকটিকে স্থিতিশীল করা। ব্যাংকিং কমিশন গঠন হচ্ছে। তাদের মাধ্যমে প্রতিটি দুর্বল ব্যাংককে খতিয়ে দেখা হবে। এরপর ফিট অ্যান্ড প্রপার টেস্টের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো ব্যক্তি মালিকানায় ফেরত দেওয়া হবে।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তো সরাসরি যেতে পারি না। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করা হবে। এখন অনেক ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভবিষ্যতে ফসল ফলানোর জন্য সারের প্রয়োজন হবে। ডলারের অভাবে সরকারের সার আনতে সমস্যা হচ্ছে।
তাই আমরা বাজার থেকে ডলার কিনে বিএডিসিকে সাপোর্ট দিচ্ছি, যাতে আমদানি করে পর্যাপ্ত সার মজুদ করা যায়।’
ডিজিটাল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস নগদের ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স আপাতত স্থগিত করা হয়েছে বলেও জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেন, ‘তাদের ডিজিটাল ব্যাংকিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া পুনরায় রিভিউ (পর্যালোচনা) করা হবে। রিভিউ অনুযায়ী যদি তারা যোগ্য হয়, তাহলে পুনরায় তারা লাইসেন্স পাবে। নগদের মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) পরিষেবা ধ্বংস করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়, এটাকে আরো শক্তিশালী করব।’
সরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের আটকে দাবি আদায়ের বিষয়ে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরানোর দায়িত্ব সরকার ও নাগরিকের উভয়েরই। কাউকে ব্ল্যাকমেইল করে দাবি আদায় করাটা ঠিক নয়। তবে যাদের যৌক্তি দাবি আছে তাদের বিষয় বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে ব্যাংকের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে যাচাই-বাছাই করে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ব্যাংকের পর্ষদ গঠনে যোগ্য লোকের অভাব রয়েছে বলেই ধীরে ধীরে পর্ষদ ভাঙা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘সৎ, পেশাদার ও অভিজ্ঞ লোকদের দিয়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের চেষ্টা করছি। লোকসংকট বলেই আমরা প্রথমে বেশি লোক দিচ্ছি না। পাঁচ-ছয়জন দিয়েই বোর্ড গঠন করছি।’
প্রসঙ্গত, গত বুধবার ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকটির নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। এই ব্যাংকে পাঁচজনকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদকে। তিনি ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক এবং ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রূপালী ব্যাংকের এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এক চিঠিতে ইসলামী ব্যাংককে এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন পর্ষদের অন্য পরিচালকরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জলিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের অধ্যাপক এম মাসুদ রহমান এবং সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ আব্দুস সালাম। এর মধ্যে আব্দুস সালাম বেশ আগে ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন।