অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবারের ঈদুল ফিতরে বাংলাদেশ রেলওয়েকে সর্বোচ্চ আয় এনে দিয়েছে চট্টগ্রাম হেডকোয়ার্টারের টিটিই'রা। যা, ঈদের আগে ও পরের ৫ দিনে আয় প্রায় ৪১ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে।
ঈদে ঘরমুখো মানুষের চাপ সামলাতে ঈদের বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শতভাগ টিকিট অনলাইনে ছাড়া হয়। টিকিটের তুলনায় প্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেক বেশী থাকায় স্বল্প সময়ের মধ্যেই নির্ধারিত দিনের সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। রেলওয়ের নিজস্ব সার্ভারে জাতীয় পরিচয় পত্র ও নির্দিষ্ট মোবাইল নাম্বার দিয়ে সফল ভাবে রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমেই পাওয়া যায় রেলওয়ের টিকিট। "টিকিট যার ভ্রমণ তার" নীতিতে রেলওয়ের নির্দিষ্ট দিনের ট্রেনের একটি টিকিটের বিপরীতে প্রত্যাশী থাকে কয়েক হাজার যাত্রী। অনলাইনে টিকিট ক্রয় প্রক্রিয়া বোধগম্য না হওয়ায় অনেকেই কাটতে পারেননি কাঙ্ক্ষিত টিকিট। এসব যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে পরে অবশ্য কাউন্টারে অল্প সংখ্যক টিকিট বিক্রীর সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এর পরেও অনেকেই টিকিট না পেয়ে শূন্য হাতে ফিরে যান।
এছাড়া প্রতিটি আন্ত:নগর ও কমিউটার ট্রেনের সর্বমোট আসনের বিপরীতে ২৫ শতাংশ আসনবিহীন টিকেট ইস্যু করা হয়, যা নির্দিষ্ট ট্রেন ছাড়ার এক ঘন্টা আগে স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি হয়। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। আসনবিহীন টিকিটের ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ে না রেজিস্ট্রেশনের। বিপুল পরিমাণ যাত্রীদের চাপ সামলাতে ও বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এই সময়ে টিটিই'দের মাধ্যমে ব্লক চেক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। টিটিই কর্তৃক পজ মেশিনের দ্বারা ইএফটি বা বাড়তি ভাড়ায় ভ্রমণে আগ্রহী যাত্রীদের আসনবিহীন টিকিট ইস্যু করা হয়। ফলে বিপুল সংখ্যক ঘরমুখো যাত্রীসাধারণ সহজেই ট্রেন ভ্রমণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে পারেন। পজ মেশিনের মাধ্যমে ইস্যুকৃত আসনবিহীন এই সব টিকিট রেজিষ্ট্রেশন ছাড়াই যাত্রীরা সহজেই ক্রয় করতে পারেন। গন্তব্য স্টেশনের নির্ধারিত ভাড়ার সাথে বাড়তি ভাড়া যুক্ত করে আগ্রহী যাত্রীদের টিকেট দেয়ার কাজটি করেন রেলওয়ের টিটিই,গণ। এর ফলে বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধের পাশাপাশি অনেক যাত্রী যেমন রেল ভ্রমনের সুযোগ পান তেমনি রেলওয়ের রাজস্বে যুক্ত হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। ঈদের পাঁচ দিন আগে থেকেই শুরু হয় ব্লক চেকিং কার্যক্রম।
সরেজমিনে দেখা যায় গত মাসের ২৬ তারিখ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত অর্থাৎ ৩০ তারিখ অব্দি ব্লক চেকিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয় সাতাশ লাখ একত্রিশ হাজার সাতশত ষাট টাকা। এছাড়া ঈদের পরে চলতি মাসের পাঁচ তারিখ পর্যন্ত টিটিই'গণের আয় চৌদ্দ লাখ আঠারো হাজার দুইশত ত্রিশ টাকা। যা পূর্বের যেকোন সময়ের চাইতে বেশী। এদিকে ঈদের পরে কক্সবাজারগামী ট্রেন গুলোতে যাত্রীদের উপচে পড়া ভীড় পরিলক্ষিত হয়। কক্সবাজারে ট্রেন চালু হবার পর থেকে এই পথে যাত্রীদের আগ্রহ সবার শীর্ষে। যাত্রীদের চাপ ও চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত চলাচলকারী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ও পর্যটক এক্সপ্রেসের পাশাপাশি গত ১লা ফেব্রুয়ারী থেকে প্রবাল ও সৈকত নামে আরো দুই জোড়া আন্ত:নগর ট্রেন সংযুক্ত করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যার ফলে এই পথে বিপুল সংখ্যক যাত্রী চলাচলের সাথে বেড়েছে রেলওয়ের আয়। শুধু কক্সবাজারের ট্রেনে ঈদ পরবর্তী পাঁচদিনের আয় পাঁচ লাখ একান্ন হাজার ছয়শত বিশ টাকা।
রেলের রাজস্ব বৃদ্ধিতে টিটিই'দের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম হেডকোয়ার্টারের এসআরআই (সিনিয়র ইন্সপেক্টর) মোশাররফ হোসেন বলেন, 'এই বারের ঈদে আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অনেকটাই অর্জন হয়েছে। বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধের উদ্দেশ্যে প্রায় সবাইকে টিকিটের আওতায় আনতে পেরেছি। টিটিই'দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এই কার্যক্রম সফল হয়েছে। যার দরুন বিগত বছরের তুলনায় ১০ লাখ টাকার বেশী আয় হয়েছে। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাধ্যমে বিনা টিকিটের যাত্রী শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে'। বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম হেডকোয়ার্টারের জুনিয়র টিটিই টিটু দত্ত বলেন, ' বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধ টিটিই'দের একটি চলমান প্রক্রিয়া ও প্রধান দায়িত্ব। শতভাগ বিনা টিকিটের যাত্রীদের টিকিটের আওতায় আনার লক্ষ্যে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি'। চট্টগ্রাম বিভাগীয় বানিজ্যিক কর্মকর্তার অধীন চট্টগ্রাম ও লাকসাম টিটিই হেডকোয়ার্টার।
এই দুই হেডকোয়ার্টারে কাজ করছে প্রায় চল্লিশ জন টিটিই। রেলওয়ের রাজস্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি যাত্রী সেবা ও নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করেন তারা। এই দুই টিটিই হেডকোয়ার্টার যৌথভাবে এই ঈদে ষাট লাখ টাকার বেশী রাজস্ব দিয়েছে রেলওয়েকে। এই অর্জনের ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বানিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ টিটিই'দের ভূয়সী প্রসংশা করে লাল সবুজ বাংলাদেশকে জানান, 'বিনা টিকিটি যাত্রী প্রতিরোধে টিটিই'রা অত্যন্ত সফলতার সাথে তাদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছে। বিভাগীয় বানিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে যা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। এই সাফল্যের জন্য প্রত্যেক টিটিই কে সাধুবাদ জানাই'।
