ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

গাজায় রমজানেও ফেরেনি সুদিন, ফেরেনা সুদিন

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১.৪৮ অপরাহ্ন

আপডেট : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১.৪৮ অপরাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 941278 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 941278 জন
গাজায় রমজানেও ফেরেনি সুদিন, ফেরেনা সুদিন
ছবি : সংগৃহীত

বেলা পড়ে এসেছে। কিছু সময় বাদে ইফতার। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফিলিস্তিনি এক নারী। পাশে খেলা করছে শিশুসন্তানেরা। এবারের পবিত্র রমজানে তাঁদের ঠাঁই হয়েছে বুরেজি শরর্ণার্থীশিবিরের একটি তাঁবুতে। গত বুধবার মধ্য গাজায়বেলা পড়ে এসেছে। কিছু সময় বাদে ইফতার। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফিলিস্তিনি এক নারী। পাশে খেলা করছে শিশুসন্তানেরা। মুয়াজ্জিনের সুমধুর কণ্ঠে আজানের ধ্বনি আর ভেসে আসে না। মসজিদগুলোই নেই। বোমার আঘাতে সবকিছু মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। ফজরের আজান শুনে এখন আর রোজা শুরু করতে পারেন না ইসরা আবু কামার। মাগরিবের আজান কানে আসার পর মুখে তুলতে পারেন না ইফতার। ইসরার বাড়ি ফিলিস্তিনের গাজায়। পবিত্র রমজানের বহু স্মৃতি তাঁর মনের গভীরে জমা। সেসব স্মৃতি এখন কাঁদায় তাঁকে, যেমনটা কাতর করে তোলে উপত্যকার সব মানুষকে। গত বছরের মতো এবারও রমজান তাঁদের জন্য উৎসবের আমেজ নিয়ে আসেনি। আসবেইবা কীভাবে? ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের নির্মম হামলা গাজাবাসীর জীবন থেকে সব খুশি কেড়ে নিয়েছে।


তবে গত রমজানের তুলনায় এবার গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে রয়েছেন। দেড় মাস হলো যুদ্ধবিরতি চলছে। মুহুর্মুহু বোমার শব্দ এখন আর ভেসে আসে না। তাই তো প্রথম রমজানে একসঙ্গে ইফতার করেছেন রাফার একটি এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তার ওপর বিশাল সেই জমায়েতে যোগ দিয়েছিলেন মধ্যবয়স্ক নারী ফাতিমা আবু হেলাল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর একটিই চাওয়া, ‘আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, সবকিছু আগের মতো করে দিন।’ আগের দিনে গাজায় একসঙ্গে ইফতার করাটা আনন্দের বিষয় ছিল। রোজা ছিল উপত্যকার মানুষের জন্য উৎসব, আয়োজন, মানুষে মানুষে মিলে যাওয়ার এক উপলক্ষ। সন্ধ্যা হলেই ঘরবাড়ি ও সড়কগুলো আলোকিত হতো লন্ঠন আর রংবেরঙের বাতিতে। প্রতিবেশীদের নিয়ে আয়োজন করা হতো হরেক পদের ইফতারির। রাত গড়িয়ে গেলেও রাস্তায় মানুষের আনাগোনা কমত না। পরিবার–পরিজন নিয়ে তারাবিহর নামাজ আদায় করতে যেতেন মুরব্বিরা। টেলিভিশনে চলত রমজানের অনুষ্ঠান। রাস্তায় রাস্তায় শিশুরা খেলাধুলা করত। ধর্মীয় গান গেয়ে মাতিয়ে রাখত পাড়া। এবার সেই শিশুদের অনেকেই নেই। বহু মানুষ হারিয়েছেন বাবা–মা, ভাই–বোন, কোলের সন্তান। ইসরায়েলের হামলা এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়েছে। হারিয়ে যাওয়া কাছের মানুষগুলোর কথা দীর্ঘশ্বাস হয়ে ফেরে নগরীর বাসিন্দা ইসরা আবু কামারের কাছে। তিনি বলেন, ‘এবারের রমজানে আমার ভালোবাসার মানুষগুলো আর নেই। আমার এক ফুফা ছিলেন। প্রতি রমজানে ইফতারে নিমন্ত্রণ করতেন। তাঁকে নির্মমভাবে মেরে ফেলা হয়েছে।


বান্ধবী শাইমা, লিনা আর রোয়ার সঙ্গে প্রতিদিন মসজিদে দেখা হতো। তারাও শহীদ হয়েছে।’ পুরোনো দিনগুলো আবার ফিরে পাওয়া এখন গাজাবাসীর কাছে স্বপ্নের মতো। খাবারই তো ঠিকমতো মিলছে না তাঁদের। যুদ্ধবিরতির শুরুর দিকে সীমান্ত খুলে দিয়েছিল ইসরায়েল। তাই বাজার কিছুটা স্বাভাবিক ছিল। কয়েক দিন হলো আবার সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে কমছে মজুত, হু হু করে বাড়ছে দাম। গাজা নগরীর আবু ইস্কান্দার বাজারের বিক্রেতা হাসান আবু রামির হিসাবে, সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার আগে যে টমেটের দাম ছিল ৪০০ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৭৩০ টাকা। আর এক কেজি রান্নার গ্যাসের দাম ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১২ হাজার টাকা। পেট চালাতে শেষ সঞ্চয়টাও খরচ করে ফেলেছেন গাজার অনেক বাসিন্দা। এত দাম দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় সদাই কেনা তাঁদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। উপত্যকার সাধারণ মানুষ এবার যা পাচ্ছেন, তা দিয়েই সাহ্?রি–ইফতার সারছেন। এর মধ্যে রয়েছে ভাত, রুটি, মোলোখিয়া (একধরনের স্যুপ) বা সবজি। একটু সচ্ছল কারও কপালে জুটছে মাংস, রুটি ও পেঁয়াজ দিয়ে তৈরি খাবার মুসাখান।


রোজার মাসে ত্রাণের লাইনও দিন দিন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। এক থালা রান্না খাবারের জন্য শিশু থেকে বৃদ্ধ—কাড়াকাড়ি করছেন সবাই। পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একের পর এক উসকানিতে। গত বুধবারও তিনি বলেছেন, গাজায় বন্দী বাকি জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া না হলে ‘নরকের পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। যুদ্ধবিরতি দ্বিতীয় ধাপে যেতেও গড়িমসি করছে ইসরায়েল সরকার। ফলে গাজায় আবার হামলা শুরুর শঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার অর্থ আবারও শুরু হতে পারে মৃত্যু–রক্তপাত।


এত আশঙ্কার মধ্যেও আশা ছাড়তে নারাজ ইসরা আবু কামার। তাঁদের ঘরবাড়ি, মসজিদ ভেঙেছে, তবে বিশ্বাসটা অটুট। ভাঙা বাড়ি ও তাঁবুর মধ্যেই তারাবিহর নামাজ আদায় করছেন। নামাজ শেষে মোনাজাতে আল্লাহর কাছে জানাচ্ছেন সব চাওয়া–পাওয়ার কথা। মনের প্রশান্তির জন্য তিলাওয়াত করছেন পবিত্র কোরআন। এই দুর্দশার মধ্যেও ইসরা বেঁচে থাকতে চান তাঁর মা–বাবার জন্য, সবাইকে নিয়ে করতে চান ঈদ, ঠিক যেন ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশের কবিতার মতো—‘জীবনকে ভালোবাসি। কারণ, আমি মরে গেলে মায়ের কান্না আমার সহ্য হবে না।’


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | সারা বিশ্ব
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১.৪৮ অপরাহ্ন
আপডেট : মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ১১.৪৮ অপরাহ্ন