ঢাকা
খ্রিস্টাব্দ

ভারত-পাকিস্তান বিরোধে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক সমীকরণ

দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১.২৪ পূর্বাহ্ন

আপডেট : রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১.২৬ পূর্বাহ্ন


নিউজটি দেখেছেনঃ 1083408 জন

  • নিউজটি দেখেছেনঃ 1083408 জন
ভারত-পাকিস্তান বিরোধে বদলে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক সমীকরণ
ফাইল ছবি : এএফপি

ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কে পরিবর্তন আনছে, যেখানে নয়াদিল্লি আফগানিস্তানের তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছে, আর ইসলামাবাদ বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে।  দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক অবস্থান মূলত এ অঞ্চলের দুটি বৃহত্তম দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।  পারমাণবিক শক্তিধর ভারত ও পাকিস্তান—যারা ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের অবসানের সময় উপমহাদেশ থেকে পৃথক হয়েছিল—এ পর্যন্ত একাধিক যুদ্ধ করেছে এবং এখনো তারা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী। এ প্রতিদ্বন্দ্বিতার কোনো অবসান হচ্ছে না, বরং তা আরো গভীর হচ্ছে। জানুয়ারিতে নয়াদিল্লি অস্বীকার করেছিল, তারা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে গোপন অভিযানের মাধ্যমে ভারতবিরোধী যোদ্ধাদের হত্যা করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল অভিযোগটি উড়িয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনার নিজের উঠানে সাপ পুষে রাখতে পারেন না এবং আশা করতে পারেন না যে তারা শুধু আপনার প্রতিবেশীদেরই কামড়াবে।’ এদিকে আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের প্রায় চার বছর পর দেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কও অবনতি হয়েছে। ইসলামাবাদ অভিযোগ করছে, তালেবান সরকার পাকিস্তানি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে, যারা আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা চালিয়ে পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাজারো সদস্যকে হত্যা করেছে।

এ ছাড়া ডিসেম্বরে পাকিস্তান আফগান সীমান্ত অঞ্চলে প্রাণঘাতী বিমান হামলা চালায়, যার পরবর্তী সময়ে সীমান্তে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটে। প্রথম দেখায় তালেবানের কঠোর ইসলামী ব্যাখ্যার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী জাতীয়তাবাদের সম্পর্ক অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। ভারত তবু এই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে। ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক হাসান আব্বাস এএফপিকে বলেন, ‘ভারত বেশ কিছুদিন ধরেই ধারাবাহিকভাবে এই কৌশল অনুসরণ করছে। তিনি আরো বলেন, ‘তারা চায় না, তালেবান এমন কোনো গোষ্ঠীকে জায়গা দিক, যা শেষ পর্যন্ত ভারতের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে পাকিস্তানকে বিরক্ত করার সম্ভাবনাটিও নয়াদিল্লির কাছে আকর্ষণীয়।’ ‘আরো কিছু করতে চাই’ ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক বিক্রম মিসরি জানুয়ারিতে দুবাইয়ে তালেবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মৌলভি আমির খান মুত্তাকির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।


জয়সওয়াল এই সাক্ষাৎকে ‘এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ের সংযোগ’ বলে বর্ণনা করে বলেন, নয়াদিল্লি ‘আফগান জনগণের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে চায়’। এ ছাড়া মুত্তাকি ‘সম্পর্ক সম্প্রসারণের আশাবাদ’ ব্যক্ত করেছেন বলেও তার মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন। জয়সওয়াল জানান, বৈঠকে ভারতের ৩৭০ মিলিয়ন ডলারের উন্নয়নকৃত ইরানের চাবাহার কনটেইনার বন্দরের ব্যবহারকে ‘উৎসাহিত করার’ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, যাতে এটি ভূমিবেষ্টিত আফগানিস্তানের বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে সহায়তা করতে পারে। চাবাহার বন্দর পাকিস্তানের গোয়াদর বন্দরের ঠিক পশ্চিমে অবস্থিত, যা পাকিস্তানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অবকাঠামো সম্প্রসারণের অন্যতম প্রধান প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। ভারত দীর্ঘদিন ধরে চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বাড়ানো নিয়ে সতর্ক। পাশাপাশি বিশ্বে জনসংখ্যায় শীর্ষস্থানে থাকা এ দুটি দেশ দক্ষিণ এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারে প্রতিযোগিতা করছে, যদিও সম্প্রতি তাদের মধ্যে কূটনৈতিক উষ্ণতা দেখা যাচ্ছে। দুবাই বৈঠকের পর দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এক সম্পাদকীয়তে লিখেছে, তালেবানের সঙ্গে নয়াদিল্লির ‘নীরব কিন্তু সচেতন সংযোগ’ আঞ্চলিক কৌশলগত সম্পর্ক পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পত্রিকাটি আরো লিখেছে, ‘তালেবান সরকারকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও ভারত আফগানিস্তানে নিজেদের অবস্থান নিশ্চিত করার গুরুত্ব বুঝতে পারে।’ ‘এই উদ্যোগ ভারতের বৃহত্তর আঞ্চলিক কৌশলের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যার লক্ষ্য পাকিস্তানে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ও এর প্রভাব মোকাবেলা করা।’


‘আমার শত্রুর শত্রু’ : একই সময়ে দীর্ঘদিনের শত্রু পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এখন ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ সম্পর্কের কথা বলছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ একসময় একই রাষ্ট্র ছিল, কিন্তু ১৯৭১ সালের ভয়াবহ যুদ্ধে তারা বিভক্ত হয়। এরপর বাংলাদেশ ভারতের আরো কাছাকাছি চলে আসে। তবে দীর্ঘদিনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে এক বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন এবং হেলিকপ্টারে করে তার পুরনো মিত্র ভারতে আশ্রয় নেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের প্রত্যর্পণ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে অবস্থান করছেন, যদিও তার বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে। এর পর থেকে বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে, যা ইসলামাবাদ ও ঢাকার জন্য সম্পর্ক পুনর্গঠনের সুযোগ করে দিয়েছে। পাকিস্তানের একটি কার্গো জাহাজ কয়েক দশক পর সরাসরি বাংলাদেশে পণ্য পরিবহন করে এবং গত নভেম্বরে চট্টগ্রাম বন্দরে মালামাল খালাস করে। ডিসেম্বরে বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তারা ‘সম্পর্ক দৃঢ় করতে সম্মত হন’ বলে জানান। পরে শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশি সামরিক কমান্ডাররা পাকিস্তান সফর করেন এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। এ সময় তারা দুই দেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের’ প্রশংসা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আমেনা মহসিন এএফপিকে বলেন, এই আকস্মিক ঘনিষ্ঠতা আন্তর্জাতিক কূটনীতির অন্যতম পুরনো নীতিকে প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, ‘আমার শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু।’


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ এলএসবিডি/হেনা

কমেন্ট বক্স
বাংলাদেশ | সারা বিশ্ব
দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক | দৈনিক লাল সবুজ বাংলাদেশ
ঢাকা
রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১.২৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১.২৬ পূর্বাহ্ন