চট্টগ্রামে বিজয়মেলার স্থান আবারও পরিবর্তন হচ্ছে। সবশেষে সিদ্ধান্ত হয়— বিজয়মেলা বসবে কাজীর দেউড়ির সেই ‘পরিত্যক্ত’ শিশুপার্কে। এদিকে বার বার মেলার স্থান পরিবর্তন হওয়ায় পিছিয়েছে উদ্বোধনও। ৯ ডিসেম্বরের মেলা শুরু হবে ১১ ডিসেম্বর।এর আগে প্রথমে নগরের আউটার স্টেডিয়ামে করতে গিয়ে ‘তোপের মুখে’ পড়ে স্থান পরিবর্তন করে জেলা প্রশাসন। পরে রেলওয়ের মালিকানাধীন সিআরবির মাঠে মেলা করার সিদ্ধান্ত নেয়। বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে এ তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের স্টাফ অফিসার শাকিব শাহরিয়ার। তিনি বলেন, মেলার স্থান আবারো পরিবর্তন হয়েছে। আউটার স্টেডিয়াম থেকে সরিয়ে সিআরবিতে করার কথা ছিল। পরে সেখান থেকে সরিয়ে আবার কাজীর দেউড়ির শিশুপার্কের খালি জায়গায় বসানো হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মেলার সময়ও পিছিয়েছে। আগামী ১১ ডিসেম্বর বিজয়মেলা শুরু হবে। মেলায় স্টল বসানোর জন্য কাজ শুরু হচ্ছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী মেলা করার সিদ্ধান্ত নেয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেই হিসেবে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে চট্টগ্রামেও বিজয়মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। তবে দেশব্যাপী একদিনের মেলা হলেও চট্টগ্রামে সাত দিনব্যাপী মেলার সিদ্ধান্ত হয়। মেলার স্টল স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা আয়োজনের কাজ প্রায় সেরে ফেলেছিল জেলা প্রশাসন। পরে তোপের মুখে পড়ে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয়। এরপর নগরের ফুসফুস খ্যাত সিআরবিতে করার কথা জানায়। তবে ‘অজানা’ কারণে সেই স্থানেও মেলা না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শেষমেষ বিজয়মেলা হচ্ছে নগরের কাজীর দেউড়ির ‘পরিত্যক্ত’ শিশুপার্কে।
এদিকে সারাবছরই বিভিন্ন মেলাসহ ইভেন্ট আয়োজনে দখলে থাকতো আউটার স্টেডিয়াম। এছাড়া মাঠটি বিভিন্ন গাড়ির পার্কিংসহ ব্যবহার হতো ট্রাক টার্মিনাল হিসেবেও। সেই মাঠের প্রাণ ফিরিয়ে খেলার উপযুক্ত করতে আন্দোলন করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সর্বস্তরের মানুষ। ২০২৩ সালে আউটার স্টেডিয়াম এলাকার দুপাশে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। ওই বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর আউটার স্টেডিয়াম উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) সভাপতি আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে এক কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের মাঠের মধ্যে ৮ হাজার বর্গফুট ফুটবল খেলার মাঠ হিসেবে রাখা হয়। সেই সময় তৎকালীন জেলা প্রশাসক বলেছিলেন, আউটার স্টেডিয়ামে আর কোনো মেলা হতে পারবে না। নতুন আঙ্গিক দেওয়ার পর এখানে নিয়মিত খেলা হবে। এর মাধ্যমে মাঠটির অতীত ঐতিহ্য ফিরে আনা হবে। বছর ধরে ‘খেলার মাঠে মেলা নয়’ ঢাকঢোল পিটিয়ে এমন ‘নীতিবাণী’ প্রচার করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অথচ তামিম নাফিস আফতাবদের মতো উঠে আসা একঝাঁক ক্রীড়াতারকার ‘জন্মস্থান’ চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে ফের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলার আয়োজন প্রায় সেরে ফেলেছিল জেলা প্রশাসন। পরে খেলোয়াড়, ক্রীড়ামোদিদের তোপের মুখে জেলা প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।