মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধ ও অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে এই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, "যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা এবং নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা না থাকে, ততক্ষণ স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়। তারা এমন জায়গায় ফিরবে না, যেখানে তাদের জীবন হুমকির মুখে ও অধিকার বঞ্চিত হতে হবে।"
রবিবার (৪ মে) বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত "বাংলাদেশে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: আঞ্চলিক নিরাপত্তায় কৌশলগত প্রভাব ও ভবিষ্যৎ পথ" শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা দমন-পীড়নের কারণে তৃতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা ঢল নামে বাংলাদেশে। এর আগেও প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে বলেন, "শুরু থেকেই আমরা অনেকেই জানতাম — শুধু দ্বিপাক্ষিক আলোচনা যথেষ্ট হবে না। এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি। এটা স্পষ্ট যে এ প্রক্রিয়া ব্যর্থ।"
তিনি আরও বলেন, "কূটনীতি ত্যাগ করতে পারি না, তবে আমাদের নতুন কৌশল ভাবতে হবে। কেবলমাত্র শক্তিশালী আন্তর্জাতিক চাপ, আঞ্চলিক সমন্বয় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।"
তিনি মিয়ানমারের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলেন, “মিয়ানমার কখনোই পূর্ণ গণতন্ত্র ছিল না। অং সান সু চির আমলেও সেটা ছিল আধা-সামরিক শাসন। এখন দেশটিতে চলছে পূর্ণাঙ্গ গৃহযুদ্ধ।”
তিনি মিয়ানমারের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমাধানে সেনা জান্তা, আরাকান আর্মি এবং ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (NUG)-কে মূল অংশীজন হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “বিশেষ করে আরাকান আর্মিকে অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ তারা রাখাইন রাজ্যের একটি বিশাল অংশ এখন নিয়ন্ত্রণ করছে।”
রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে আরও জোরালো কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।