News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/2B7
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শুধু গত কয়েক দিনে কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে অন্তত ৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। শনিবার (৩ মে) রাতে সরকারের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নতুন আসা রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে এবং কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনায় অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছে। তবে তাদের স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা এখনো হয়নি। তিনি বলেন, “খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তবে নতুন করে ঘর তৈরির মতো অবস্থায় আমরা নেই। আমরা প্রত্যাবাসনের দিকেই জোর দিচ্ছি।”
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দিয়ে নতুন রোহিঙ্গাদের আবাসনের ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানিয়েছে। তবে এখনো বাংলাদেশ ওই চিঠির আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পেছনে রয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা ও নিপীড়নের ঘটনা। সেখানে আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে বেসামরিক রোহিঙ্গারা আবারও পালিয়ে আসছে। মংডু জেলার বুড়া শিকদাপাড়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকে কক্সবাজারে বসবাসরত স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আনুমানিক ১৩ লাখ ১৩ হাজার। নতুন অনুপ্রবেশ রোধ ও সংকট মোকাবিলায় সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে নতুন রোহিঙ্গাদের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করলেও এখনো আইরিশ স্ক্যানিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
জানা যায়, চলতি বছরের প্রতিদিনই সীমান্ত পেরিয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত সপ্তাহেই ১ হাজার ৪৪৮টি পরিবার এবং আরও ৫ হাজার ৯৩০ জন আলাদাভাবে বাংলাদেশে এসেছে। নতুন আসা রোহিঙ্গারা ২৯ হাজার ৬০৭টি পরিবারের সদস্য।
বাংলাদেশের সীমান্তে নজরদারি থাকা সত্ত্বেও এসব মানুষ কক্সবাজারের ২০টি ক্যাম্পে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে ৫৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ নারী।
নতুন রোহিঙ্গাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবস্থান করছে ক্যাম্প ২৭, ২৬, ২৪, ৯, ১২, ওয়ান-ই, ১৮, ৪, ১৩, ৭, ১৭, ১৫, ৮-ই, ওয়ান-ডব্লিউ, টু-ই, ২৫, ৫, ১০, ১৬, ৩, ১১, ১৯, ২১, টু-ডব্লিউ, এইট-ডব্লিউ, ১৪ ও ২০ নম্বর ক্যাম্পে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও।
এদিকে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মিয়ানমারের রাখাইনের মংডু বুড়া শিকদাপাড়া এলাকায় রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। দেশটির রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মির সদস্যরা এ নিপীড়ন চালাচ্ছে। এতে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের পূর্বদিকে অবস্থিত শিকদারপাড়া থেকে অনেক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত তাদের স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কেউ কেউ পালিয়ে আসছেন।
পালিয়ে এসে টেকনাফের জাদিমুড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া এমনই একজন আমির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, তার কিছু স্বজন এখনও শিকদাপাড়ায় বসবাস করছে। শনিবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে। এদিন সকালে গ্রামে ঢুকে খোলা আকাশের দিকে গুলি চালায় আরাকান আর্মি। এর পর মাইকিং করে ঘর থেকে সবাইকে বের হতে বলে। এক পর্যায়ে একটি খালি মাঠে সবাইকে জড়ো করে। এ সময় আরসাকে কারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের নাম প্রকাশ করতে বলা হয়। এর ব্যত্যয় হলে সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তিন মাস আগে পালিয়ে আসা আমির আরও জানান, রাখাইনের লডাইং, উচিংজং, নাকমুড়া, কুলি পাড়াসহ বেশ কিছু এলাকায় এখনও রোহিঙ্গাদের বসতি রয়েছে। সেখানে আরাকান আর্মি অনেকের ঘরে গিয়ে আরসার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গাদের দিনভর রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখছে তারা। এতে সেখানকান রোহিঙ্গারা ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে চেষ্টা করছে।
আরাকান আর্মি নতুন করে মংডুতে হামলা চালাচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন উখিয়া ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মো. জুবায়ের। তিনি বলেন, আরসাকে আশ্রয় দেওয়ার বাহানা করে কাল চার গ্রামে হামলা চালানো হয়েছে। মূলত সেখানে এখনও থাকা রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এ ধরনের অজুহাতে নির্যাতন চালাচ্ছে আরাকার আর্মি।
রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারের সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত শুরুর পর থেকেই রোহিঙ্গাদের এই ঢল অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তের নাফ নদ ছাড়াও পাহাড়ি পথ ব্যবহার করে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এমন পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা চাপের সঙ্গে নতুন করে আরো সংকটে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।