News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/fO
নিজস্ব প্রতিনিধি, মিরসরাই ::
চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় ৯জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (১০ মে) রাতে ৮ নং দুর্গাপর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মুরারীপুরের বাসিন্দা মৃত নুরের জামানের ছেলে আরিফ হোসেন (৩৫) জোরারগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি উপজেলা নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকের পক্ষে কাজ করায় দুর্গাপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাপ-পিরিচ মার্কার কর্মী কামরুল হাসান (৩৬), হারুণ (৪৫), সোহেল (৩৮), রুপন দে (৩৮), নয়ন দাশ (২৪) এর নেতৃত্বে ৮/১০ জন রাত ৮.৩০ মিনিটে পূর্ব পরিকল্পিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র, কিরিচ, লোহার রড, হকস্টিক, রামদা দিয়ে জনৈক বসরের রাইস মিলের সামনে এলোপাতাড়িভাবে তাঁকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করে মারাত্মকভাবে জখম করে বলে একটি অভিযোগের কপিতে উল্লেখ করেন। এছাড়া এ ঘটনায় তাঁর মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনতাই হওয়ারও অভিযোগ করা হয়।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত কামরুল হাসান বলেন, কে বা কারা হামলা করেছে তা আমি জানিনা। আমাদেকে দেখলে ঘোড়া প্রতীকের কর্মীরা ব্যঙ্গ বিদ্রæপ করে, বরং আমার মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। পরবর্তীতে সেটি চুরি করে নিয়ে যায়। ঘটনার সাথে আমরা কেউ জড়িত নই।
উক্ত ঘটনার তদন্ত কর্মকর্তা জোরারগঞ্জ থানার এসআই মতিউর রহমান বলেন, নির্বাচন পরবর্তী উত্তেজনায় উভয় পক্ষের দাওয়া-পাল্টা দাওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে পরিবেশ শান্ত। আমি তদন্ত করে থানার অফিসার ইনচার্জ বরাবর রিপোর্ট পেশ করবো।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে উপজেলার ১২নং খইয়াছরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনুর হামলায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন (৩৫) আহত হয়েছেন। উপজেলার খৈয়াছরা ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ের ভিতরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত ছাত্রলীগ নেতা শাখাওয়াত হোসেন মিরসরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
শাখাওয়াত খৈয়াছরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের পূর্ব পোলমোগরা এলাকার আব্দুর রূপ মুন্সী বাড়ির মো. ওমর ফারুকের ছেলে।
শুক্রবার (১০মে) সন্ধ্যায় উপজেলার ৪ নং ধুম ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের বর্তমান ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম (৩৭) কে তার নিজ বাড়ীর সামনে রড়, চুরি, হকস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে খানসাব (৩২), ইমন(১৯), শিবলু (২৭), রাকিব (২৫), নবি (৪৭), মোজাম্মেল নেতৃত্বে ৮/১০ জনের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে আহত করে। সাইফুল ইসলাম গন্যমাধ্যম কর্মীদের জানান, তারা হত্যার উদ্দেশ্যে এই নেক্কারজনক কাপুরুষিত হামলা চালায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি সম্পাদকের নেতৃত্বে হামলার ঘটনা ঘটে বলে তিনি জানান।
এই ব্যাপারে ইউনিয়ন ছাত্র লীগের সভাপতি আরসে আজিম শিবলু ও সাধারণ সম্পাদক রাকিব বলেন, গত রমজানে ছাত্রলীগের জুনিয়র গ্রæপের সাথে মেম্বার সাইফুলের সমস্যাকে কেন্দ্র করে জুনিয়ররা হামলা করতে পারে। আমরা উক্ত ঘটনায় জড়িত নই।
জানা গেছে বুধবার (৮ মে) ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে বুধবার মিরসরাই উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে চেয়ারম্যান পদে বিজয় লাভ করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন (কাপ-পিরিচ)। নির্বাচনী ফলাফল শেষে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান (ঘোড়া) প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে উপজেলা জুড়ে হামলা পাল্টা হামলার ঘটনার খবর আসছে ।
এদিকে বুধবার (৮ মে) রাত ১০টায় বাবলু এবং আফাজের নেতৃত্বে খৈয়াছরা ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারে মন্নান সওদাগরের দোকানে ভাঙচুর এবং হামলা চালায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতাকারী শেখ আতাউর রহমান (ঘোড়া) প্রতীকের সমর্থকরা। হামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত এনায়েত হোসেন নয়নের (কাপ-পিরিচ) এজেন্ট আমজাদ হোসেন (৩৫), সোহরাব হোসেন সোহেল (৩০), ওয়াসিম উদ্দিন সুমন (৩৫) ও সাইফুল ইসলাম (৩০) আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আমজাদ হোসেন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছেন।
আহত আমজাদ হোসেন বলেন, বুধবার রাত ১০ টায় বাবলু এবং আফাজের নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি গ্রæপ এসে বড়তাকিয়া বাজার আমার দোকান মান্নান স্টোরে এসে অতর্কিত হামলা চালায় এবং আমার দোকানে থাকা রড দিয়ে আমাকে এবং আমার সাথে আরও ৩ জনের উপর তারা হামলা করে।
তিনি আরও বলেন, আমি কেন এনায়েত হোসেন নয়নের (কাপ-পিরিচ)'র জন্য কাজ করেছি। আমরা কেন শেখ আতাউর রহমানের ঘোড়া সমর্থনে কাজ করি নাই এজন্য তারা আমাদের উপর হামলা করেছে।
আহত খৈয়াছরা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমার জেঠাতো ভাই মো. জাহেদ (৫০) উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এনায়েত হোসেন নয়নের কাপ পিরিচ মার্কার সমর্থনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা করায় প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী শেখ আতাউর রহমানের (ঘোড়া) সমর্থক আফাজ এবং বাবলু সকালে বড়তাকিয়া বাজারে মারধর করে। আমার জেঠাতো ভাইকে মারধরের বিষয়টি স্থানীয় চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনুকে মৌখিকভাবে জানাতে গেলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে কিল ঘুসি, চড়-থাপ্পড় ও লাথি মেরে এবং হাতে থাকা কলম দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। পরবর্তীতে আমার চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
শাখাওয়াত আরও বলেন, আমি যদি এ ঘটনায় মামলা করি তাহলে আমাকে পুনরায় মারধর করবে বলে হুমকি ধমকি প্রদান করছে। আমি এ হামলার বিচার চাই।
এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে খৈয়াছরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক জুনু বলেন, শাখাওয়াত নামে একজন এসে আমাকে থ্রেট মূলক কথাবার্তা বলতেছে, তখন আমি রাগান্বিত হয়ে শাখাওয়াতের গালে দুটি থাপ্পড় দিয়েছি। এখানে তখন অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মো. এরশাদ উল্লাহ বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে শাখাওয়াত হোসেন একজন হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন।
মিরসরাই থানার উিউটি অফিসার এসআই আমির হোসেন বলেন, শাখাওয়াতের উপর হামলার বিষয়ে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, খইয়াছড়া ইউনিয়নে নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতার বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা সম্পর্কে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মিরসরাই সার্কেল) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, হামলা বা সংঘাত রাজনৈতিক নয়, আমি বেশ কয়েকটি তদন্ত করে দেখেছি ব্যক্তিগত রেষারেষি বা পূর্ব শক্রতার কারণে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখানে ঘোড়া প্রতীক বা কাপ-পিরিচ প্রতীকের সমস্যা নয় বলে মনে করেন তিনি। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলেও জানান তিনি।