News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/2xf
চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে চলায় জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা দেখা দিয়েছে। বুধবার (২৩ এপ্রিল) বেলা তিনটায় পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ২৮ শতাংশ।
এর আগে মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা কমেছে ৩৩ শতাংশ।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে এটি জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২৮ মার্চ জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও ওই দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল যশোরে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তিনি বলেন, কাল বৃহস্পতিবার ও পরশু শুক্রবার তাপমাত্রা আরও বাড়বে। এরপর দুই দিন স্থিতিশীল থাকার পর ২৭ এপ্রিল থেকে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা আছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে ১৪ মার্চ জেলায় তাপপ্রবাহ শুরু হয়। ওই দিন বেলা তিনটায় জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর পর্যায়ক্রমে ১৬ মার্চ ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৭ মার্চ ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৮ মার্চ ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৯ মার্চ ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩০ মার্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৩ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৫ এপ্রিল ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ৬ এপ্রিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গতকাল ২২ এপ্রিল ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আজ ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হলো।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। সেই হিসেবে গত ১৪ মার্চ থেকে আজ পর্যন্ত অন্তত ১১ দিন জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। যার মধ্যে আট দিন মৃদু ও বাকি তিন দিন মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে।
এদিকে জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে চলায় জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা দেখা দিয়েছে। মানুষের বাইরে চলাচল সীমিত হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না। শহরে মানুষের আনাগোনাও কমে গেছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে এর প্রভাব পড়েছে। খায়রুল ইসলাম নামের একজন কাপড় বিক্রেতা বলেন, দিনের বেলা গ্রামের খদ্দের বেশি আসে। তাপ বেড়ে যাওয়ায় খদ্দের বাজারে আসা কমে গিয়েছে। বেচাকিনা না থাকায় শুয়ে-বসে কাটাতে হচ্ছে।
এদিকে তাপপ্রবাহের মধ্যেই মেঘের ঘনঘটা কৃষকদের ভাবিয়ে তুলেছে। ঝড়বৃষ্টির আগেই ভুট্টা ও বোরো ধান ঘরে তোলার মৌসুমে কৃষিশ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে। সুযোগ বুঝে শ্রমিকেরা অন্যান্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ মজুরি দাবি করছেন।
দুপুরে সদর উপজেলার বোয়ালমারী মাঠে কথা হয় কৃষক আবুল কাশেমের সঙ্গে। কচুখেতে সেচ দিচ্ছিলেন তিনি। রোদ থেকে রক্ষা পেতে শ্যালো মেশিনের পাশে মোটা চটের ছাউনি দিয়েছেন। জমিতে সেচনালা তদারকির মাঝে মাঝে ছাউনির নিচে এসে বসছেন এবং শ্যালো মেশিন থেকে চোখেমুখে পানি ছিটাচ্ছেন। কচুর পাশাপাশি ভুট্টা ও ঢ্যাঁড়স আবাদ করেছেন এই কৃষক।
আবুল কাশেম বলেন, রোদ আর গরমে টেকা যাচ্ছে না। মন বলছে না য মাঠে আসি। বাড়ি বসে থাকারও উপায় নেই। জনের দাম (শ্রমিকের মজুরি) এখন ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। আগে যেখানে ছিল ৪০০ টাকা। একই সময়ে ধান কাটা, ভুট্টা তোলা, পাট নিড়ানি, কচু নিড়ানির কারণে বেশি টাকা দিয়েই শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নিজেই জমিতে আসছি।