News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/2vM
রাশিয়া ও ইউক্রেন রবিবার একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষিত এই যুদ্ধবিরতি নিয়ে বিরোধ দেখা দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, পুতিন আকস্মিকভাবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও রুশ বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্রে গোলাবর্ষণ ও হামলা অব্যাহত রেখেছে।
ধর্মীয় উৎসব ইস্টার উপলক্ষে স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতিকে তিন বছরের যুদ্ধের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিরতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনী রাতভর কোনো ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার খবর না দিলেও প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অভিযোগ করেন, যুদ্ধবিরতি শুরুর পরও রাশিয়া যুদ্ধক্ষেত্রে হামলা চালিয়েছে।
অন্যদিকে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করেছে এবং কিয়েভ শত শত ড্রোন ও গোলাবারুদ নিক্ষেপ করেছে, যার ফলে বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তারা বলেছে, ‘ইস্টারের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরও ইউক্রেনীয় সেনারা রাতে দোনেৎস্ক অঞ্চলে আমাদের অবস্থানে হামলার চেষ্টা চালিয়েছে।’
রাশিয়ার সীমান্তবর্তী বেলগোরদ অঞ্চলের গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ বলেন, এক ড্রোন হামলায় এক নারী ও দুই শিশু আহত হয়েছে।
পাশাপাশি রাশিয়ার দখলে থাকা দোনেৎস্ক অঞ্চলের গোরলভকা শহরের রুশ নিযুক্ত মেয়র ইভান প্রিখোদকো জানান, সেখানে দুই বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে। তবে তিনি বিস্তারিত আর কিছু জানাননি।
ইউক্রেন রবিবার শত শত হামলা ও ড্রোন উৎক্ষেপণের মুখে পড়েছে জানিয়ে জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার মতোই প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং তা অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তাদের সেনারা যুদ্ধবিরতির শর্ত কঠোরভাবে মেনে চলছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে এবং এখন দেশটির প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখলে রেখেছে।
‘কম মানুষ মরবে’
ইস্টার সপ্তাহান্তে সব ধরনের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার নির্দেশ দেন পুতিন। এই ঘোষণার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাসব্যাপী প্রচেষ্টা রয়েছে বলে জানা গেছে। তিনি মস্কো ও কিয়েভকে একটি যুদ্ধবিরতিতে রাজি করানোর চেষ্টা করছিলেন। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ারি দেয়, যদি অগ্রগতি না হয় তবে তারা আলোচনার টেবিল থেকে সরে যাবে।
ইউক্রেনীয় সেনারা জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে কিছুটা শান্ত পরিবেশ লক্ষ করেছেন। ড্রোন ইউনিটের একজন কমান্ডার বলেন, ‘রাশিয়ার তৎপরতা জাপোরিঝিয়া ও খারকিভ অঞ্চলে স্পষ্টভাবে কমে গেছে। এই দুটি যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে আমরা কাজ করি। কিছু হামলার চেষ্টা হয়েছে, তবে সেগুলো ছোট ছোট দল পরিচালিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা। আজ কমসংখ্যক সেনা মারা যাবে।’
সুমি সীমান্ত অঞ্চলে লড়াইরত ইউক্রেনীয় জুনিয়র লেফটেন্যান্ট সার্গেই এক বার্তায় বলেন, ‘রাশিয়া গোলাবারুদ নিক্ষেপ করছে না। পরিস্থিতি সাধারণ দিনের তুলনায় অনেকটাই শান্ত। ড্রোন অবশ্য উড়ছে, তবে সেগুলোর বেশির ভাগই নজরদারির জন্য, আঘাত হানার জন্য নয়। আমরা প্রতিরক্ষায় আছি। শত্রুপক্ষ এগিয়ে না এলে আমরা গুলি চালাচ্ছি না।’
পূর্ব ইউক্রেনে একটি উঁচু স্থানে অবস্থানরত এএফপির সাংবাদিকরা জানান, সেখানে অন্য সময়ের তুলনায় কম বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে এবং আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা যায়নি।
‘শান্তির সুযোগ দিন’
টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পুতিন এ যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, এটি ‘মানবিক কারণে’ নেওয়া সিদ্ধান্ত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ইউক্রেনও এই যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে। তবে রুশ সেনাদের সতর্ক থাকতে এবং যেকোনো লঙ্ঘন বা উসকানির মুখে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রস্তুত থাকতে বলেন।
জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেনও যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে এবং এটি ৩০ দিন বাড়ানোর প্রস্তাব দেন, যেন ‘শান্তির সুযোগ দেওয়া যায়’। তিনি রবিবার বলেন, রাশিয়া এখনো এই প্রস্তাবে কোনো সাড়া দেয়নি।
এর আগে পুতিন পূর্ণ ও শর্তহীন ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।
২০২২ সালের এপ্রিলের ইস্টার ও ২০২৩ সালের জানুয়ারির অর্থোডক্স ক্রিসমাস উপলক্ষে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। দুই পক্ষই একে অপরকে দোষারোপ করেছিল।