News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/2oN
ব্যাংককে অনুষ্ঠিত বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। দুই দেশের সরকার প্রধানের এই বৈঠকটি ছিল ফলপ্রসূ, খোলামেলা এবং গঠনমূলক। বৈঠকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে দুই নেতাই নিজেদের দেশগুলোর সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার বিষয়ে দৃঢ় অঙ্গীকার করেছেন।
তিনি আরও বলেন, গত আট মাসে দুই দেশের মধ্যে বহুবার দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ হয়েছে এবং সম্পর্কের সামনের পথ সুগম করতে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
অধ্যাপক ইউনূস বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে, সাত সদস্য দেশসমূহের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের সমর্থন কামনা করেন। তিনি গঙ্গা ও তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির নবায়ন এবং চূড়ান্তকরণের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনূসকে বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য অভিনন্দন জানান এবং দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বৈঠকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা উঠে আসে। অধ্যাপক ইউনূস ভারতের কাছে জানতে চান, শেখ হাসিনা কেন এমন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, "ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার করছে।" তিনি ভারত সরকারকে অনুরোধ জানান, এই ধরনের বক্তব্য থেকে শেখ হাসিনাকে বিরত রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে।
এছাড়া, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উত্থাপিত হলে, অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "এ ধরনের ঘটনা রোধে যৌথভাবে কাজ করা উচিত, যা দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করবে।" প্রধানমন্ত্রী মোদি ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালানোর কথা উল্লেখ করে বলেন, "এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারতের ভেতরেই ঘটে, কিন্তু আমাদের একসঙ্গে এই সমস্যা সমাধান করতে হবে।"
প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের প্রতি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এর জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "এ ধরনের অভিযোগ অতিরঞ্জিত এবং বেশিরভাগই ভুয়া খবর।" তিনি ভারত সরকারকে এসব ঘটনা স্বচক্ষে যাচাই করার জন্য সাংবাদিক পাঠানোর অনুরোধ করেন এবং বলেন, "আমরা দেশে ধর্মীয় সহিংসতা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।"
বৈঠকটি সমাপ্তির দিকে এসে, দুই নেতা একে অপরকে সুস্থতা ও মঙ্গল কামনা করে পরস্পরের দেশে শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বৈঠক থেকে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও গভীর ও ফলপ্রসূ হবে, এবং দুই দেশের নেতারা একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি এবং উন্নতির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।