চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় বিএনপির দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মো. জাবেদ (৪০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। বুধবার (২৬ মার্চ) দুপুরে বারইয়ারহাট পৌর বাজারে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা নিয়ে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান এবং আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মো. নুরুল আমিন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরেই দুপুরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে, যা পরবর্তীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন জানিয়েছেন, সংঘর্ষের পূর্বে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও, স্বাধীনতা দিবসের দিন শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এর পরই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বারইয়ারহাট এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, এবং আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করেছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে চিকিৎসাধীন আহতরা হলেন সুমন (৩৫) ফজলুল করিম (৪৩), জাহেদুল ইসলাম (৪২), শহিদুল ইসলাম (৫১), ওমর ফারুক (৩৫), দিদার (৩৭), আবু সুফিয়ান (৪০), ফাহিম (২২), এরশাদ (৪০), গোলাম মোর্শেদ (৪০), রাশেদ (৫০), দিদারুল আলম চৌধুরী (৪০), ইলিয়াছ (৫০)। আহত সুমন, গোলাম মোর্শেদ, ইলিয়াস হোসেন ও রাশেদকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের সবাই ধারালো দেশীয় অস্ত্রে জখমপ্রাপ্ত হয়েছেন। সংঘর্ষে আহত ৬ জন বারইয়ারহাট জেনারেল হাসপাতালে এবং আহত ৫ বারইয়ারহাট মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
মিরসরাই উপজেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদপ্রাপ্ত ও পদবঞ্চিতদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। এরই মধ্যে মঙ্গলবার একটি পক্ষ মহাসড়ক অবরোধ করে। পরিস্থিতি ঘিরে সকাল ৬টা থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও সংঘর্ষ থামানো যায়নি।
এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন, সংঘর্ষের সময় তাদের কয়েকজন কর্মী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছিল। নিহত জাবেদ হোসেন সম্পর্কে বারইয়ারহাট পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাঈনুদ্দিন লিটন জানান, এটি একটি পরিকল্পিত হামলা ছিল এবং তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আব্দুল আউয়াল চৌধুরী বলেন, মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আমরা মিরসরাই উপজেলা আহবায়ক কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের সীদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধশীল হয়ে সেখানে না গিয়ে নিজামপুর কলেজ শহীদ মিনারে পুস্তস্তবক অর্পণ করেছি। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি পছন্দ করিনা।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ১৪৪ ধারা ভেঙে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেছি। ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে ১৪৪ ধারা জারির মতো কোন পরিস্থিতি আজ ছিল না। প্রশাসন কেন ১৪৪ ধারা জারি করেছে সেটি বোধগম্য নয়। আর বারইয়ারহাটে আজিজ- লিটন নেতৃত্বে আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর প্রথমে হামলা করে।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে গত ২দিন ধরে উত্তেজনা চলে আসছে। বুধবার সকালে বারইয়ারহাট পৌরবাজারে বিএনপির দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় জাবেদ নামে একজন পথচারী নিহত হয়েছেন। আহত হন আরো বেশকয়েকজন। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মাহফুজা জেরিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে বিঘ্ন না ঘটে সেজন্য বুধবার (২৬ মার্চ) সকাল ৮ টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) সকাল ৮ টা পর্যন্ত উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর ও তার আশপাশের ৫০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু আজ (বুধবার) বেলা ১২ টায় বিএনপির একটি গ্রুপের নেতাকর্মীরা ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে মিছিল নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে প্রবেশ করেছে। মিছিলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এই বিষয়ে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে কঠোর ভূমিকা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর টহল কার্যক্রম বাড়ানোর জন্যও বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।