News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/2jW
রমজান মাসেও নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ঝিনাইদহের চালের বাজার। তিন সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালের দাম বেড়েছে আকারভেদে ৭-১২ টাকা পর্যন্ত। কয়েক মাসের ব্যবধানে দফায় দফায় চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষরা চরম বিপাকে পড়েছে। চালকল মালিকরা বলছেন, ধানের সংকটের কারণে চালের দাম বেড়ে গেছে।
সেই সঙ্গে ধানের দাম মণপ্রতি বেড়েছে ২০০-২৫০ টাকা। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, চালকল মালিক ও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে চাল মজুদ করছে। পরে বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে চালের দাম বাড়াচ্ছে তারা।
জানা গেছে, রমজানের আগে ঝিনাইদহের বাজারে প্রতি কেজি স্বর্ণা চালের দাম ছিল ৫০-৫২ টাকা কেজি। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬২ টাকায়। কাজললতা ৬৪-৬৫ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২ টাকায়। সরু চাল মিনিকেট ৭০ থেকে এখন ৮০ টাকা। আর দেশি বাসমতী বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৪ টাকায়। যা আগে বিক্রি হয়েছিল ৯০-৯২ টাকায়। রবিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা, হামদহ ও ওয়াপদা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি স্বর্ণা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।
এ ছাড়া কাজলতা ৭২, আঠাশ ৭৪, মিনিকেট ৮০ ও বাসমতী চাল আকারভেদে ১০০-১০৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শহরের নতুন হাটখোলা বাজারে চাল কিনতে আসা রিকশাচালক আব্দুল খালেক বলেন, ‘গত মাসে যে চাল ৫০ টাকায় কিনতাম তা এখন ৬০ টাকা কেজি করে কিনতে হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে চালের দাম বেড়েই যাচ্ছে। চাল কিনতেই সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিভাবে সংসার চালাব বুঝতে পারছি না।’ আরেক চাল ক্রেতা রিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আগের চেয়ে কেজি প্রতি ১০ টাকা বেশি দামে চাল কিনলাম। ব্যবসায়ীরা তাদের খেয়াল খুশিমতো চালের দাম বাড়িয়েই যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্টরা এখন পর্যন্ত এদিকে নজর দিচ্ছে না।’নতুন হাটখোলা বাজারের চাল ব্যবসায়ী আসাদুর হমান বলেন, ‘হঠাৎ করেই মিনিকেট ও বাসমতীসহ সব প্রকার চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন মিলাররা। কোনো নির্দেশনা ছাড়াই চালের দাম কেজি প্রতি আকারভেদে ৭-১২ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তারা সিন্ডিকেট করে যখন যা ইচ্ছে তা-ই করে। এ জন্য ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের ঝগড়া-বিবাদে জড়াতে হচ্ছে।’হামদহ এলাকার মুদি ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলাম বলেন, ‘আড়ত থেকে বেশি দামে চাল কিনে এনে আগের মতো বিক্রি করতে পারছি না। আমাদের কাছে থেকে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষেরা চাল কেনে। কয়েক দিন ধরে চাল বিক্রি অনেক কমে গেছে।’সদর উপজেলার হাটগোপালপুর এলাকার শুভ অ্যাগ্রো প্রগতি অটো রাইস মিলের মালিক তপন কুমার বলেন, ‘পরিবহন, শ্রমিক ও বিদ্যুতের দাম যেভাবে বাড়ছে সেই তুলনায় চালে দাম বাড়েনি।
এ ছাড়া হঠাৎ করে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। তাই কয়েক প্রজাতির চালের দাম কেজি প্রতি সামান্য বাড়ানো হয়েছে।’জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বাজারে ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা চাল উৎপাদন করতে পাচ্ছি না। এ জন্য সরু চালের দাম সামান্য কিছু বেড়েছে। আমাদের এখানে অবৈধ মজুদদার ও সিন্ডিকেট নেই।’জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নিশাত মেহের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রমজান মাসের শুরু থেকেই আমরা কঠোরভাবে বাজার মনিটর করছি। সিন্ডিকেট ও অবৈধ মজুদদারদের সন্ধান পেলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের ছয় উপজেলায় ১৮টি অটো রাইস মিলসহ মোট ২৭০টি চালকল রয়েছে।