News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/1UL
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই নির্বাহী আদেশের ঝড় তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ওয়ান অ্যারেনার মঞ্চে প্রথম ভাষণে তিনি বলেন, শীঘ্রই বাইডেন আমলের সব নির্বাহী আদেশ বাতিল করবেন তিনি।এর কিছুক্ষণ পরই তিনি যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন তার মধ্যে শুরুতেই তিনি বাইডেন আমলের ৭৮টি নির্বাহী আদেশ বাতিল করেন। স্থগিতাদেশে সই করার পর ট্রাম্প জনতার উদ্দেশ্যে সেটি তুলে ধরে দেখান। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে আগেই ইঙ্গিত দেওয়া হয়, শপথ নেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ২০০টি নির্বাহী আদেশের ঘোষণা দিতে পারেন রিপাবলিকান নেতা। শুল্ক বৃদ্ধি, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলসহ নানা পরিবর্তন আনছেন ট্রাম্প।
জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব : বিগত প্রায় ১৫০ বছর ধরে মার্কিন ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া শিশুরা ‘জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব’ পেয়ে আসছেন। পুরোনো এই সাংবিধানিক অধিকারকে ‘হাস্যকর’ বলেছিলেন ট্রাম্প। তবে সেই অধিকারকে বাতিল করে এবার নির্বাহী আদেশ জারি করেছন ট্রাম্প। এই আদেশ কার্যকর হবে চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে। শপথ নেওয়ার পরে এসংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। তবে শুধু নির্বাহী আদেশ দিয়েই এই নীতি পরিবর্তন করা কঠিন। কারণ, মার্কিন সংবিধানে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে যদি অবৈধ অভিবাসীর সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে সেই শিশুরা আর মার্কিন নাগরিক হবেন না। এদিকে জন্ম নেওয়া শিশুর মা-বাবা যদি বৈধ ভাবেই আমেরিকায় গিয়ে থাকেন, কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো একজন সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাহলেও সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। এ ছাড়া কেউ যদি স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা বা টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে সন্তানের জন্ম দেয়, তাহলেও সেই শিশু আর মার্কিন নাগরিক হবে না।
জলবায়ু নীতি : জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে গৃহীত ‘প্যারিস জলবায়ু চুক্তি’ থেকে বেরিয়ে আসার নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
স্থানীয় সময় সোমবার (২০ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পরপরই এ সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে সই করেন তিনি। ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বের হয় আসেন ট্রাম্প। নতুন বায়ু–বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং বৈদ্যুতিক গাড়ির আদেশ বাতিল করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
ক্যাপিটল হিলের দাঙ্গা : ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় যুক্ত থাকার অভিযোগে আটক হওয়া প্রায় ১ হাজার ৫০০ মানুষকে ক্ষমা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিনের প্রায় পুরোটা সময় তার সমর্থকরা ডিসি জেলের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন।
অভিবাসন নীতি : মেক্সিকো সীমান্তে সোমবার জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি বলেছেন, বেশ কিছু নির্বাহী আদেশ জারি করতে যাচ্ছেন তিনি। তার মধ্যে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে তিনি জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করবেন। অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরে যেসব নির্বাহী আদেশে সই করেছেন, তার মধ্যে একটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি, আরেকটি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব আইনসংক্রান্ত। ট্রাম্প খুব দ্রুত তার ‘রিমেইন ইন মেক্সিকো’ নীতি আবারও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রথম মেয়াদে তিনি এই নীতি গ্রহণ করেছিলেন। মাদকচক্র বা কার্টেলগুলোকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা হবে এসব নির্বাহী আদেশে। 'এলিয়েনস এনিমিস অ্যাক্ট অব ১৭৯৮' পুনর্বহাল করা হবে, যাতে কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্যগুলো 'যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে বিদেশি গ্যাংগুলো' দমনে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে পারে। এ ছাড়া শপথগ্রহণের দিনটিকে তিনি 'মুক্তির দিন' বলে বর্ণনা করেন।
শুল্ক: আমদানি পণ্যের ওপর ব্যাপক শুল্কারোপের আশ্বাস দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রথম মেয়াদে প্রেসিডেন্ট থাকাকালে চীনসহ বিভিন্ন দেশের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করেছিলেন ট্রাম্প। এবার ট্রাম্প সব ধরনের আমদানি পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্কারোপের আশ্বাস দিয়েছেন। এর মধ্যে কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ শুল্কারোপ করা হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এসব শুল্ক ভোগ্যপণ্যকে আরও ব্যয়বহুল করতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে। কিছু দেশ এর বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের কথা ভাবছে।
শুধু নারী-পুরুষকে স্বীকৃতি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শুধু দুটি লিঙ্গ পুরুষ এবং নারীকে স্বীকৃতি দেবে, যা অপরিবর্তনীয়। প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর এমনই মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার শপথ নেওয়ার পর তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সেখানে ট্রান্সজেন্ডারদের বিষয়টি তোলেন ট্রাম্প। ট্রাম্প এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষার লক্ষ্যে পরিচালিত বিভিন্ন নীতিমালা দ্রুত বাতিল করার জন্য নির্দেশ দেন। গত বছরই নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় ট্রাম্প জানিয়ে রেখেছিলেন, নারীদের খেলায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করবেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের অ্যাথলেটরা সাধারণত নারীদের ইভেন্টে অংশ নিয়ে থাকেন। ট্রাম্প বারবার স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবায় ট্রান্সজেন্ডারদের অংশগ্রহণের সমালোচনা করে এটিকে ‘ট্রান্সজেন্ডার পাগলামি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। টিকটক : যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এটি তার দ্বিতীয় মেয়াদ। শপথ নেওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন নির্বাহী আদেশের ঝড় তুলেছেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম টিকটকের ওপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার করে নির্বাহী আদেশে সই করেন। টিকটকের সঙ্গে সম্পর্কিত আদেশে স্বাক্ষর করার ঠিক আগে ট্রাম্পকে একজন সাংবাদিক জিজ্ঞাসা করেন— কেন তিনি আগে টিকটকের বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছিলেন এবং কেন তিনি এখন তার মত পরিবর্তন করেছেন। এর উত্তরে ট্রাম্প বলেন, এটি "চুক্তির ওপর নির্ভর করে"। তিনি বলেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক চালানোর আদেশে স্বাক্ষর করতে পারেন বা নাও করতে পারেন। তবে তিনি যদি চুক্তিটি না করেন তাহলে টিকটক অ্যাপটি যুক্তরাষ্ট্রে "অর্থহীন" হয়ে পড়বে। ট্রাম্প বলেন, মূলত এই চুক্তির জন্য টিকটক তার মূল্যের অর্ধেক যুক্তরাষ্ট্রকে প্রদান করবে। এরপর ট্রাম্প টিকটক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, তবে এর বিষয়বস্তুর কোনো সুনির্দিষ্ট বিবরণ দেননি তিনি।
গর্ভপাত: ট্রাম্প ‘মেক্সিকো সিটি নীতি’ পুনর্বহাল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ফলে গর্ভপাতবিষয়ক পরামর্শ সেবাদাতা আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীগুলোকে কেন্দ্রীয় সহায়তা দেওয়া নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। তিনি একটি গর্ভপাতবিষয়ক বিধিও পুনর্বহাল করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ: ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হওয়ার প্রথম দিনেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন। যুদ্ধ বন্ধে তাঁর ছয় মাস সময় লাগতে পারে। তবে যুদ্ধ বন্ধে প্রথম দিনগুলোয় কী পদক্ষেপ নেবেন, এখনো তা স্পষ্ট নয়। শপথ নেওয়ার দিনও ট্রাম্প জানিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধ বন্ধে চুক্তিতে পৌঁছাতে চান।
ডব্লিউএইচও থেকে বেরিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র : জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। এরপর তিনি বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে সই করেন। এর মধ্যে ডব্লিউএইচও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত আদেশও রয়েছে। নির্বাহী আদেশে সইয়ের পর ট্রাম্প বলেন, ‘ওহহ, এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ।’ ট্রাম্প আরো বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এত দিন অন্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র ‘অন্যায্য পরিমাণে’ অর্থ প্রদান করেছে। এ ছাড়াও মেক্সিকো নীতি, সীমান্ত বন্ধ, সীমান্তে প্রাচীর, ক্রিপ্টো মজুত, গোপন নথি, কিউবা ও ভেনেজুয়েলা, বৈচিত্র্য, ন্যায্যতা ও অন্তর্ভুক্তির (ডিইআই) নিয়ে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর বিটকয়েনের দাম ৩০ শতাংশ বেড়েছে। অনেকের বিশ্বাস, বিটকয়েনের একটি কেন্দ্রীয় মজুত গড়ে তোলার জন্য ট্রাম্প খুব দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন।ট্রাম্প বলেছিলেন, ১৯৬৩ সালে প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যাকাণ্ড–সম্পর্কিত গোপন নথি প্রকাশ করবেন তিনি। এ ছাড়া সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ‘সন্ত্রাসবাদের মদদদাতা’ দেশের তালিকা থেকে কিউবার নাম বাইডেন সরিয়ে দিলেও ট্রাম্প তা বাতিল করতে পারেন। ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও পুনর্বহাল করতে পারেন।