News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/1T4
দেশে মিঠাপানির ২৬০ প্রজাতির মাছের মধ্যে ছোট মাছ রয়েছে ১৪৩ প্রজাতির। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলাশয় সংকোচন, অতি আহরণসহ নানাবিধ কারণে মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বিনষ্ট হওয়ায় ৬৪ প্রজাতির মাছ ছিল বিলুপ্তপ্রায়। এসব মাছ খাবার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টার কমতি নেই মৎস্য বিজ্ঞানীদের। এরইমধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা ৪০ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছেন।
এসব মাছের মধ্যে বিলুপ্তপ্রায় ১২ প্রজাতির মাছের পোনা সারাদেশের হ্যাচারিতে ব্যাপকভাবে উৎপাদন হচ্ছে। ফলে চাষাবাদের আওতায় এসেছে মাছগুলো। এতে বাজারে এসব মাছের দামও কমেছে।
ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, পাবদা, গুলশা, ট্যাংরা, কৈ, মাগুর, শিং, গুজি আইড়, দেশি সরপুঁটি, জাতপুঁটি, বাটা, বালাচাটা, কুচিয়া, কুর্শা, খলিশা, ভেদা, গুতুম, ঢেলা, গজার, ফলি, চিতল, গনিয়া, মহাশোল, বৈরালি, ভাগনা, আঙ্গুস, বাতাসি, পুঁইয়া, কাকিলা, পিয়ালী ও রাণীসহ ৪০ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন সম্পন্ন করেছেন বিজ্ঞানীরা। এরমধ্যে বর্তমানে হ্যাচারিতে শিং, মাগুর, কৈ, ট্যাংরা, পাবদা, গুলশা, বৈরালিসহ ১২ প্রজাতির মাছ ব্যাপকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। সবশেষ ২০২২ সালে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে শাল বাইম মাছের কিছু পোনা উৎপাদনে সফলতা আসে। এখনো পুরোদমে চলছে গবেষণা। প্রচুর পরিমাণে এই মাছের পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে সারাদেশের হ্যাচারিগুলোতে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা জানান, দেশীয় ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ ও আয়োডিনের মতো প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এসব উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে এবং রক্তশূন্যতা, গলগণ্ড, অন্ধত্ব প্রভৃতি রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই বিলুপ্তপ্রায় মাছগুলো খাবার টেবিলে ফেরাতে দেশের বিভিন্ন নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড় ও পুকুর থেকে ৮৮ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো বিএফআরআইয়ে অবস্থিত ‘লাইভ জিন ব্যাংক’-এ সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরমধ্যে যেসব মাছের সফল কৃত্রিম প্রজনন সম্পন্ন হয়েছে, সেসব মাছের বিপুল পরিমাণ পোনা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে। এতে এ খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি মাছ উৎপাদনে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমানে সাপের মতো দীর্ঘাকার, নলাকার ও আশঁবিহীন শাল বাইমের বিপুল পোনা উৎপাদনে আলাদা সময় দিচ্ছে বিজ্ঞানীরা। কারণ এ মাছটিও ব্যাপক জনপ্রিয়।
সরেজমিন ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী মেছুয়া বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সবধরনের বড় মাছের সঙ্গে একসময় বিলুপ্তির আশঙ্কায় থাকা বিভিন্ন দেশীয় ছোট মাছ রয়েছে। ছোট মাছের সরবরাহ বাড়ায় দামও কমেছে। ক্রেতারা এসব মাছ স্বাচ্ছন্দ্যে কিনে নিচ্ছেন।
ইদ্রিস আলী নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘বিভিন্ন ফিশারিতে এখন গুলশা, পাবদা, শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা, বৈরালিসহ বিভিন্ন দেশীয় ছোট মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ মাছ বাজারে আসছে। কয়েক বছরের ব্যবধানে ছোট মাছের সরবরাহ বাড়ায় আগের চেয়ে দামও কমেছে।’
কথা হয় জাহিদ হোসেন নামের একজন ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতিকেজি পাবদা মাছ ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমি এককেজি কিনেছি। অথচ কয়েকবছর আগেও এই মাছটির সরবরাহ কম ছিল। বাজারে এসে তেমন পাওয়া যেত না। এখন বেশি পরিমাণ চাষ হওয়ায় আমাদের খাবার টেবিলে ফিরেছে পাবদাসহ বিভিন্ন দেশীয় ছোট মাছ।’
চাঁদপুরে চলছে ইলিশ নিয়ে গবেষণা
বিএফআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, আগে শুধু ইনস্টিটিউটের ময়মনসিংহের স্বাদুপানি গবেষণা কেন্দ্র থেকে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে গবেষণা পরিচালনা করা হতো। বর্তমানে ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্র ছাড়াও বগুড়ার সান্তাহার, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর ও যশোর উপকেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণে গবেষণা পরিচালনা করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে বিলুপ্তপ্রায় সব মাছকে খাবার টেবিলে ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে গবেষণা করা হচ্ছে।
খাবার টেবিলে ফিরেছে বিলুপ্তপ্রায় ৪০ প্রজাতির দেশি মাছ
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ড. অনুরাধা ভদ্র জাগো নিউজকে বলেন, সবশেষ শাল বাইম মাছের কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। ফলে এ মাছটি এখন চাষের আওতায় আনা সম্ভব হবে। সেজন্য বিপুল পরিমাণ পোনা উৎপাদনের চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে সব দেশীয় মাছকে লাইভ জিন ব্যাংকে সংরক্ষণ করা হবে। বিলুপ্তির আশঙ্কায় থাকা সব দেশীয় মাছ পুনরুদ্বার করা হবে।