সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং ইসকন সংগঠক চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের জামিন আবেদন আজ বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত নামঞ্জুর করেছেন। আদালতের বিচারক মো. সাইফুল ইসলাম জামিন আবেদন শুনানি শেষে এই সিদ্ধান্ত নেন। এই জামিন শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের ১১ জন উকিল উপস্থিত ছিলেন, যারা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের পক্ষে যুক্তি পেশ করেন। এদিকে, আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শক্ত উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশ, বিজিবি এবং সেনাসদস্যরা বিভিন্ন পয়েন্টে মোতায়েন ছিল। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এ এ এম হুমায়ুন কবির জানায়, "আজ আদালতের ভেতরে এবং আশপাশে যথেষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।"
এছাড়া, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে গত ৩১ অক্টোবর কোতোয়ালি থানায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার বাদী ছিলেন চট্টগ্রামের একটি ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান। ঘটনার পরপরই ফিরোজ খানকে দল থেকে বসিষ্কার করে বিএনপি। এই মামলায় গ্রেফতারের পর থেকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস কারাগারে রয়েছেন।
গত ২৫ নভেম্বর ঢাকা বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর ২৬ নভেম্বর আদালত তাকে জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। আদালতের এই আদেশের পর চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের সমর্থকরা আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন, যা পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে পরিণত হয়। এই ঘটনায় সাইফুল ইসলাম আলিফ নামে এক আইনজীবী নিহত হন এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে।
মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছিল এবং এরমধ্যে সাতটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হত্যার মামলা। তদন্তকারীরা ভিডিও ফুটেজ দেখে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে।
এরআগে, ৩ ডিসেম্বর জামিন শুনানির দিন থাকলেও কোনও আইনজীবী না থাকায় শুনানির দিন ২ জানুয়ারি ধার্য ছিল। এছাড়া, গত বুধবার যে দুজনের জামিনের শুনানি ছিল, তাদের আইনজীবীও আসেননি বলে আদালত সূত্রে জানা যায়।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো.মফিজুল হক ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা জামিনের বিরোধিতা করেছি। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করেন।
চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট অপূর্ব কুমার ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর পক্ষে জামিনের শুনানি করেছি। আদালতকে জানিয়েছি, জাতীয় পতাকার কোনও অবমাননা হয়নি। ন্যায় বিচার পায়নি মর্মে এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।
এর আগে সকাল সোয়া ১০টার দিকে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন শুনানিতে অংশ নিতে আদালতে পৌঁছেন সুপ্রিম কোর্টের ১১ আইনজীবীর একটি দল। এই শুনানিকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। শুনানি শেষে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীরা পুলিশি পাহারায় আদালত থেকে বের হয়ে গাড়িতে ওঠেন। এ সময় আদালত প্রাঙ্গণে ৫০-৬০ জন আইনজীবী তাদের ‘দালাল’ বলে স্লোগান দেন এবং ‘দিল্লি না ঢাকা’ এমন স্লোগানও দিতে শোনা যায়।
উল্লেখ্য, গত ২৬ নভেম্বর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চিন্ময় দাসের জামিন না মঞ্জুর হলে ওই দিনই চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করা হয়। ওই আবেদনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ৩ ডিসেম্বর। কিন্তু ওইদিন চিন্ময়ের পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষও শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করেন। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত জামিন শুনানির জন্য ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। গত বছরের ১১ ও ১২ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে রবীন্দ্র ঘোষ নামে এক আইনজীবী গিয়ে চিন্ময়ের জামিন শুনানির তারিখ এগিয়ে আনার জন্য আবেদন করেন। কিন্তু আদালতের ভাষ্য অনুযায়ী তিনি (রবীন্দ্র ঘোষ) যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় আদালত জামিন আবেদন নাকচ করে দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত তারিখে জামিন শুনানির দিন রাখেন।