News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/aR
দেয়ালে টাঙানো সংবাদকর্মীর ‘প্রেস’ লেখা নীল রঙের লাইফ জ্যাকেট। চারপাশে অর্ধেক আকৃতির কাগজের তরমুজ। তাতে ছোট ছোট মন্তব্য। একটিতে একজন দর্শনার্থী লিখেছেন ‘আর নয় বিদ্বেষ’, আরেকটিতে লেখা ‘যুদ্ধ-সংঘাত নয়, শান্তি চাই।
দেয়ালে টাঙানো সংবাদকর্মীর ‘প্রেস’ লেখা নীল রঙের লাইফ জ্যাকেট। চারপাশে অর্ধেক আকৃতির কাগজের তরমুজ। তাতে ছোট ছোট মন্তব্য। একটিতে একজন দর্শনার্থী লিখেছেন ‘আর নয় বিদ্বেষ’, আরেকটিতে লেখা ‘যুদ্ধ-সংঘাত নয়, শান্তি চাই।
’ ‘ফিলিস্তিনিদেরও বাঁচার অধিকার রয়েছে, নিজের মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার অধিকার আছে তাদেরও’—লেখা আরেকটি কাগজের তরমুজে। এই দৃশ্য ‘গাজা হলোকাস্ট: কিলিং দ্য ট্রুথটেলার্স’ শিরোনামে একটি প্রদর্শনীর।
গাজায় নিহত সংবাদকর্মীদের নিয়ে আয়োজিত এ প্রদর্শনীতে বক্তারা বলেছেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম দ্বৈতাচারীর ভূমিকা পালন করছে।ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনে গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত নিহত ১৪২ জন গণমাধ্যমকর্মীর নামপরিচয় নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে দৃক। প্রদর্শনীতে নিহত সাংবাদিকদের একটি তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। সাংবাদিকদের নাম, ছবি ও মন্তব্য দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনালয়ের দেয়াল।
নাম পাওয়া গেছে কিন্তু ছবি পাওয়া যায়নি এমন সংবাদকর্মীদের ছবির জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে তাজা গোলাপ ফুল।
আজ রবিবার সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আলোকচিত্রী ও দৃক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম বলেন, ‘নিহত সাংবাদিকদের অনেক তালিকা পাওয়া যাচ্ছে। এইসব তালিকায় প্রতিদিনই নতুন নতুন নাম যুক্ত হচ্ছে। সবার ছবি পাওয়া যায় না, এমনকি নামও জানা যায় না।’
সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পর ছিল ‘ওয়েস্টার্ন হিপোক্রেসি অন প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনা।
শহিদুল আলমের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন মেঘনা গুহঠাকুরতা, নুরুল কবীর ও জাহেদ উর রহমান। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা বলেছেন, সব গণমাধ্যমেরই একটি রাজনীতি থাকে। পশ্চিমা গণমাধ্যম এই রাজনীতি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে। তবে এবারে পশ্চিমা মিডিয়া যেভাবে ইসরায়েলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে তাতে তাদের ভণ্ডামি ও পশ্চিমা গণতন্ত্রের মিথ্যাবাদীতা স্পষ্ট হয়ে গেছে।
জাহেদ উর রহমান বলেছেন, ‘‘পশ্চিমারা নিজেদের মনমতো যেসব আইন ও নীতি তৈরি করেছে তারাই এখন সেটা মানছে না। সারা দুনিয়া দেখছে ফিলিস্তিনে স্পষ্ট জেনোসাইড ঘটছে। পশ্চিমা গণমাধ্যম এক্ষেত্রে সরাসরি দ্বৈতাচারীর ভূমিকা পালন করছে। পশ্চিমের বিখ্যাত গণমাধ্যম ঘোষণা দিয়ে বলছে ‘জেনোসাইড’ শব্দটি কম ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে আলজাজিরা ফিলিস্তিনের পক্ষে স্পষ্ট ভূমিকা রাখছে। কিন্তু আলজাজিরাও সব ঘটনায় সত্যের পক্ষে থাকতে পারে না।’’
মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, ‘পশ্চিমা মিডিয়ায় সংকীর্ণতাবাদের চর্চা অনেক বেশি রয়েছে। এ থেকেই তৈরি হয় হিপোক্রেসি। স্পষ্ট করে বলেও না যে তারা নিপীড়িত মানুষের বিপক্ষে। এটা বললে ভালো হত। তারা মানবাধিকারের পক্ষে কথা বলে যে দাবি করে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হত না।’
নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর বলেন, ‘‘আমরা একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রাম করতে গিয়ে জেনোসাইডের ভেতর দিয়ে গেছি। তখন আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদেরও অনেকে সন্ত্রাসী বলেছে। গাজায় ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনের বড় হিপোক্রেসি হলো এটিকে ‘ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ’ বলা। এটিকে যুদ্ধ বলার মাধ্যমে নিরস্ত্র মানুষের হত্যাকে সমর্থন করা হয়। এর চেয়ে বড় মিথ্যাচার হতে পারে না। যুদ্ধ হয় দুটি কাছাকাছি শক্তির মাঝে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘হিপোক্রেসির সঙ্গে উপনিবেশের সম্পর্ক রয়েছে। এটি উপনিবেশের এক ধরনের রাজনীতি। এই রাজনীতির নিজস্ব প্রচার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে পশ্চিমা মিডিয়ার কাজ এখন ইসরায়েলের আগ্রাসী আচরণকে সমর্থন করা। এই অবস্থায় মিডিয়াকে দেখতে হবে রাষ্ট্রের বর্ধিত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ হিসেবে।’