News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/1A2
"সেরা মূল্যবান খেলোয়াড়" বা সংক্ষেপে এমভিপি (Most Valuable Player) হিসেবে অভিহিত করা হয় তাকে। তবে তার পরিচয় আরও বিস্তৃত—কিংবদন্তি, বা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচলিত শব্দে, "GOAT" (Greatest of All Time)। এই সব বিশেষণই এক নামের জন্য প্রযোজ্য: লিওনেল মেসি। ইন্টার মায়ামির আর্জেন্টাইন তারকা, যিনি দলের ১০ নম্বর জার্সি পড়ে মাঠে নামেন, অর্জন করেছেন ২০২৪ সালের এমএলএস ল্যান্ডন ডোনোভান এমভিপি পুরস্কার। তার পরিসংখ্যান এবং রেকর্ড তার এই স্বীকৃতির যথার্থতা নিশ্চিত করে, যদিও মেসি ইতোমধ্যেই ফুটবলের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করেন। অতীত তারকাখচিত হলেও, বর্তমানও সমানভাবে আলোকিত।
মেসি এবং এমভিপি শব্দ দুটি যেন একে অপরের সমার্থক। বার্সেলোনায় তিনি বহুবার এই সম্মান অর্জন করেছেন, দুটি বিশ্বকাপ এবং কোপা আমেরিকার মতো প্রতিযোগিতায় তার প্রভাব অপরিসীম। এবার তিনি এই কৃতিত্ব যোগ করলেন মেজর লিগ সকারে (এমএলএস)। যদিও ইন্টার মায়ামি কনফারেন্স কোয়ার্টার ফাইনালে বাদ পড়ে এবং এমএলএস কাপের শিরোপা হাতছাড়া হয়, তবুও মেসি তার দলকে একটি ঐতিহাসিক মৌসুম উপহার দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে ইন্টার মায়ামি পয়েন্টের রেকর্ড গড়ে, সাপোর্টার্স' শিল্ড জেতে এবং ক্লাব বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে। তবে মেসির দৃষ্টি এখনও পরবর্তী সিজনে, যেখানে তিনি এমএলএস শিরোপা জয়ের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
২০২৪ সালের এমএলএস এমভিপি হওয়ার পেছনে মেসির পরিসংখ্যান এবং মাঠে তার প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রতি ৯০ মিনিটে গোল এবং অ্যাসিস্টের সম্মিলিত অবদানের ক্ষেত্রে মেসি এমএলএস ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়। তার উপস্থিতিতে ইন্টার মায়ামি নিয়মিত মৌসুমে মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছে। তার খেলা শুধু দলের সফলতায় নয়, যুক্তরাষ্ট্রে ফুটবলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতেও অবদান রেখেছে।
মেসির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কুচো হার্নান্দেজ। কলম্বিয়ার এই স্ট্রাইকার কলম্বাস ক্রুর হয়ে ২৯ ম্যাচে ১৯ গোল এবং ১১ অ্যাসিস্ট করেন। তার অসাধারণ পারফরম্যান্স প্লে-অফে দলকে পৌঁছে দিলেও, তারা নিউ ইয়র্ক রেড বুলসের কাছে প্রথম রাউন্ডে হেরে যায়।
মেসি ২০২৪ সালের নিয়মিত সিজনে ২০ গোল এবং ১৬ অ্যাসিস্টসহ মোট ৩৬ গোল অবদান রাখেন। এটি এমএলএস ইতিহাসে এক মৌসুমে পঞ্চম সর্বোচ্চ। প্রতি ৯০ মিনিটে ২.১৮ গোল অবদানের মাধ্যমে তিনি এই লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গড় অর্জন করেছেন। ১৯ ম্যাচে অংশ নিয়ে তিনি ১৫ ম্যাচে গোল বা অ্যাসিস্ট করেছেন এবং ১১টি ম্যাচে একাধিকবার অবদান রেখেছেন।
মেসির নেতৃত্বে ইন্টার মায়ামি মৌসুম শেষ করে ৭৪ পয়েন্টে, যা নতুন রেকর্ড। এই মৌসুমে তারা ২২টি জয় অর্জন করে এবং এমএলএস ইতিহাসে প্রথম দল হিসেবে একই মৌসুমে ঘরোয়া এবং অ্যাওয়ে উভয় ক্ষেত্রেই ১১টি করে জয় তুলে নেয়।
মেসি হলেন পঞ্চম আর্জেন্টাইন যিনি এমএলএস এমভিপি পুরস্কার অর্জন করেছেন। তার আগে লুসিয়ানো অ্যাকোস্তা (২০২৩), দিয়েগো ভ্যালেরি (২০১৭), গিয়ের্মো বারোস স্কেলোটো (২০০৮), এবং ক্রিশ্চিয়ান গোমেজ (২০০৬) এই সম্মান লাভ করেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরে আর্জেন্টিনার খেলোয়াড়রাই এই পুরস্কার জয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে রয়েছে।
২০২৪ সালে মেসি ছয়বার "এমএলএস প্লেয়ার অব দ্য উইক" এবং দুইবার "এমএলএস প্লেয়ার অব দ্য মান্থ" নির্বাচিত হন। তিনি ইতিহাসে তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে একই মৌসুমে ছয়বার "প্লেয়ার অব দ্য উইক" হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন।
লিওনেল মেসি শুধু ইন্টার মায়ামি নয়, পুরো এমএলএসের জন্য একটি ঐতিহাসিক অধ্যায় রচনা করেছেন। তার অসামান্য দক্ষতা এবং অবদান তাকে ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করতে সহায়তা করেছে।