News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/1zx
চট্টগ্রামে পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ প্রকাশ ‘বুড়ির নাতি’কে ধরতে অভিযানে গিয়ে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টার দিকে সাজ্জাদের অবস্থান জানতে পেরে নগরের অক্সিজেন মোড়ের জালালাবাদ পেট্ট্রোল পাম্পের পেছনে সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই গুলি চালান সাজ্জাদ। গুলিতে পুলিশের দুই সদস্যসহ মোট চারজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত দুই পুলিশ সদস্য হলেন চান্দগাঁও থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক ফাইয়াছ হাসমিনুর রোবেল এবং রাজু আহমেদ। এছাড়াও কাজল কান্তি দে (৩৬) ও মো. জাবেদ (৩৪) নামে দুইজন সাজ্জাদের ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে কাজল কান্তি দে অক্সিজেন মোড়ের সিটি ব্যাংকের এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত। আহত দুই পুলিশ সদস্য দামপাড়া পুলিশ হাসপাতালে এবং স্থানীয় দুজন বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে, পুলিশের ওপর গুলি চালিয়ে সাজ্জাদ পালিয়ে গেলেও তার স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের হাটহাজারী, বায়েজিদ বোস্তামি, চান্দগাঁও এবং পাঁচলাইশ এলাকার মূর্তিমান আতঙ্ক দুর্র্ধষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ ওরফে ‘বুড়ির নাতি’। তিনি বায়েজিদ বোস্তামী থানা-সংলগ্ন হাটহাজারীর শিকারপুরের মো. জামালের ছেলে। আলোচিত এইট মার্ডার মামলার মৃত্যুণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি জামায়াত-শিবির ‘ক্যাডার’ সাজ্জাদ আলী খানের সহযোগী হিসেবে এই ছোট সাজ্জাদ অপরাধজগতে পা রাখেন। বিদেশে বসেই সাজ্জাদ আলী খান নির্মাণাধীন ভবন, বাসাবাড়ি এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করান ছোট সাজ্জাদকে দিয়ে।
অভিযানের সিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) রইস উদ্দিন অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, আমাদের কাছে ইনফরমেশন ছিল সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদ বায়েজিদ থানার জালালাবাদ পেট্রোল পাম্পের পেছনের একটি ভবনে অবস্থান করছে। সেই অনুযায়ী আমাদের চান্দগাঁও থানার একটি অভিযানিক দল তাকে গ্রেফতারে অভিযান চালায়। এসময় সাজ্জাদ পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে স্থানীয় দুজনসহ মোট ৪ জন আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুজন আমাদের পুলিশ সদস্য। তিনি আরো বলেন, অভিযানে আমাদের পুলিশ সদস্যরা মোট ৬ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। পরে সে বাড়ির ছাদে উঠে পাশের আরেকটি ভবনে যায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থল থেকে সাজ্জাদের স্ত্রী পরিচয় দেওয়া এক নারীকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
পুলিশ জানায়, সাজ্জাদের অবস্থান শনাক্ত করে গভীর রাত সাড়ে ৩টা থেকে ভোর ৪টার দিকে অভিযানে যায় পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়েই সাজ্জাদ তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পাশের একটি ভবনের ছাদে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় এই শীর্ষ সন্ত্রাসী। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন ওই দুজন। এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর বিকেলে নগরের চান্দগাঁও থানার অদূরপাড়া জাগরনী সংঘ ক্লাব সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে মাইক্রোবাস থেকে নেমেই স্থানীয় ব্যবসায়ী আফতাব উদ্দিন তাহসীনকে (২৭) গুলি করে হত্যা করে সাজ্জাদ বাহিনী। শুধু তাই নয়, গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিকেল চারটার দিকে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার কালারপুল এলাকায় শটগান হাতে সাজ্জাদ হোসেনসহ আরও দুজন গুলি করতে করতে একটি নির্মাণাধীন ভবনে প্রবেশ করেন। এরপর ওই ভবন মালিকের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামি থানার অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার (৩২) ও মোহাম্মদ আনিস (৩৮) নামে দুজনকে হত্যা করা হয়। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ব্যবসা ও রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে দুপক্ষের দ্বন্দ্বের জেরেই এ খুন হয়। এই চাঞ্চল্যকর ডাবল মার্ডারের ঘটনার দুই মামলায় সাজ্জাদ ও তার সহযোগীদের আসামি করা হয়।
এছাড়া, ৫ জুলাই বায়েজিদ থানার বুলিয়াপাড়া এলাকায় একটি বাসায় গুলি করেন সাজ্জাদ তাঁর সহযোগীদের নিয়ে। আর গত বছরের ২৭ অক্টোবর চাঁদা না পেয়ে দলবল নিয়ে মো. হাছান নামের এক ঠিকাদারের চান্দগাঁও হাজীরপুল এলাকার বাসায় গিয়েও গুলি করে ওরা।