বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দ্রব্যমূল্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে, এটা নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। শুধু রাজনৈতিক সংস্কার নয় অর্থনৈতিক সংস্কারের ব্যাপারেও সরকারের উচিত হবে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। গতকাল বুধবার সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের কালিবাড়ীর নিজ বাসভবনে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারে কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে, সেটা সম্পূর্ণ প্রধান উপদেষ্টার এখতিয়ার। এ ব্যাপারে বিএনপির কোনও বক্তব্য নেই। সাম্প্রতিক তিন উপদেষ্টা নিয়োগ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ প্রসঙ্গে সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অত্যন্ত বিচক্ষণ, মেধাবী এবং যোগ্য মানুষ। তিনি যাকে প্রয়োজন মনে করবেন তাকেই উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ করবেন।
তবে বিএনপির পরামর্শ থাকবে, এ ব্যাপারে যেন তারা সতর্ক থাকেন। এই নিয়োগে যেন বিতর্কিত কাউকে না নেওয়া হয় বা কোনও বৈষম্য না রাখা হয়। এ ব্যাপারে ভুল হয়ে থাকলে তারাই সেটা সংশোধন করবেন বলে আমরা আশা করি। তিনি সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেন, এই প্রস্তাব আমরা দলগতভাবে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি। বিগত স্বৈরাচারী শাসনামল যে ১৭ বছরের গার্বেজ রেখে গেছে তা ১৭ দিনে বা ১৭ মাসে পরিষ্কার করা সম্ভব না, এতে সময় লাগবে। এজন্য অধৈর্য না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেয়াওর জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তবে সবগুলো সংস্কারকাজে হাতে দেওয়ার প্রয়োজন এই সরকারের নেই। সেগুলো আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে আসা পার্লামেন্ট সম্পন্ন করবে। তবে এই সরকারের দায়িত্ব, সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ কারচুপিমুক্ত নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের প্রধান হোতা শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থান করছেন এবং ভারত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এটি বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। এ বিষয়ে সবারই সতর্ক থাকা উচিত বলে আমি মনে করি। না হলে জাতি হিসেবে আমরা অনেক বড় বিপদের সম্মুখীন হব। মির্জা ফখরুল বলেন, এখন যে প্রবণতা শুরু হয়েছে, বাংলাদেশের এই যে অর্জন, তা ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে কিছু ব্যক্তি বা কিছু লোক চেষ্টা করছে। আমি এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানাব। এ মুহূর্তে আমরা আরেকটি বিপর্যয় নিতে পারি না। রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রশ্নে তিনি বলেন, আরেকটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আমি মনে করি যে আমার মতামত দেওয়া সমুচিত নয়। কারণ এ মতামত দেবে জনগণ, কে রাজনীতি করবে আর কে রাজনীতি করবে না।
নির্বাচনে যারা জনগণের কাছে খারাপ হয়ে যাবে, তারা বাতিল হয়ে যাবে অথবা পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি আরও বলেন, আমি গণতান্ত্রিক একজন ব্যক্তি, আমি বিশ্বাস করি যে, কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, এটি জনগণের বিষয়। তিনি বলেন, এ অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব হবে নির্বাচনের জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা, সবাই যেন ভোট দিতে পারেন এবং সবাই যাতে অংশ নিতে পারে, সে জন্য কাজ করা। নিরপেক্ষ লোকজনকে নির্বাচনের জায়গাগুলোতে বসাতে হবে। বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ করা, প্রশাসনকে নিরপেক্ষ করা, নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য এগুলোই প্রধান কাজ। সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা রিজেক্ট করেছি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন সম্ভব নয়। এ সময় ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফসহ জেলা, উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।