ভেঙ্গে পড়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের চেইন অব কমান্ড। ওই সচিবালয়ের ভেতরে পুরো বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কেউ কেউ অফিস করছেন আবার কেউ কেউ অফিসে হাজিরা দিয়েই চলে যাচ্ছেন। সংসদ সচিবালয়ের ভেতরে অফিস বা কাজ করার কোনো ধরনের পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। চেয়ার, টেবিল নেই। টেলিফোন, কম্পিউটার নেই। নেই ইন্টারনেট সংযোগ। বিদ্যুতের সমস্যার কারণে অনেক জায়গায় লাইটও নেই। বেশিরভাগ এসি লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

আপাতত সংসদ সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ছাড়া কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। ভবনের মূল গেটে সেনা সদস্যর পাশাপাশি সংসদ সচিবালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী সার্জেন্ট অ্যাট আর্মসের স্টাফরা রয়েছেন। কিন্তু নজরদারি করার মতো অবস্থা সংসদ সচিবালয়ের নেই। ফলে প্রায় প্রতিদিনই সংসদ সচিবালয় থেকে গায়েব হয়ে যাচ্ছে ফাইল। ওসব ফাইল নিয়ম ও আইন মেনে তৈরি করা ছিল না। আর ওসব ফাইলের বেশিরভাগই হচ্ছে আর্থিক সংশ্লিষ্ট। সংসদ সচিবালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আর্থিক ও সংসদ সচিবালয়ের নেয়া পুরনো অনেক সিদ্ধান্তের ফাইল গায়েব হয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না শতাধিক ফাইল। সব ফাইলের বেশিরভাগই আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আরো ফাইল গায়েব হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ইতিমধ্যে যেসব ফাইল গায়েব হয়েছে তাতে শতাধিক কোটি টাকার হিসাব রয়েছে। ওসব ফাইল গায়েবের সঙ্গেসংসদ সচিবালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী সম্পৃক্ত। বাইরে থেকে টাকা দিয়ে কর্মচারীদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর ফাইল গায়েব করা হচ্ছে। তবে খুবই গোপনে ওসব হচ্ছে। ফলে স্পিকারের দপ্তর, সংসদ সচিবের দপ্তর ও কমন শাখার অনেক ফাইলের হদিস মিলছে না। আবার রাতারাতি গায়েব হয়ে যাচ্ছে কমিটি শাখার অনেক ফাইলও। ওসব ফাইলে কমিটির নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত রয়েছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক প্রভাবিত হয়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর ফাইলই গায়েব হয়ে যাচ্ছে।

সূত্র জানায়, সংসদ সচিবালয় থেকে ইতোমধ্যে গায়েব হয়ে গেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ আরো অন্তত ১০টি স্থায়ী কমিটির ফাইল। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে ৪৮টি সংসদীয় কমিটি ছিল। ওসব কমিটির বেশির ভাগই কোনো মিটিং করেনি। অথচ মিটিংয়ের নামে অর্থ বরাদ্দ ও কমিটি সদস্যদের নামে মিটিংয়ে হাজিরার টাকা দেয়া হয়েছে। ওই ধরনের বেশ কিছু ফাইল গায়েব হয়ে গেেেছ। মূলত ৫ আগস্ট সংসদ ভবনে বিপুল লোকসমাগম আটকানো যায়নি। অসংখ্য মানুষ সংসদ ভবন চত্বরের দক্ষিণ প্লাজা, খেজুরবাগান মাঠ, টানেলে ঢুকে পড়ে। আর ওইদিন বিকাল থেকে রাতভর একদল মানুষ সংসদ ভবনের প্রায় সব কক্ষেই লুটপাট চালায়।

সূত্র আরো জানায়, সংসদ সচিবালয়ের অনেক কর্মকর্তার নামে এরইমধ্যে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা হয়েছে। তাদের নামে আরো মামলার শঙ্কা রয়েছে। আর ওই ধরনের শঙ্কা থেকে আরো কিছু কর্মকর্তা আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা বিভিন্ন উপায়ে দেশ ত্যাগের পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। ওই ধরনের বেশির ভাগ কর্মকর্তার বাসা সংসদ ভবনের ভেতরে ছিল। ওসব বাসা এখন খালি। লুট হওয়ার পর তারা এসব বাসায় আর ফেরেননি। তবে যারা নিজেদের অপরাধী মনে করে না তারা তাদের বরাদ্দকৃত বাসা মেরামত ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে বাসায় উঠেছেন। এদিকে এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, সংসদ সচিবালয় থেকে ফাইল গায়েব হলে চিরস্থায়ী সমস্যার সৃষ্টি হবে। সংসদ সচিবালয়ের দায়িত্বরতদের উচিত অভ্যন্ত্ররীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো সুদৃঢ় করা।