News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/6k
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে রেহাই পেতে বৃষ্টি চেয়ে লক্ষ্মীপুরের রায়পুরসহ দেশজুড়ে ইসতিসকার নামাজ পড়া হচ্ছে। বৃষ্টির কামনায় দু-হাত তুলে কান্নায় চোখ ভাসিয়েছেন অনেকেই। তবে এই মুহূর্তে বৃষ্টি চাইছেন না ধানচাষিরা। মাঠে সোনালি ফসল।
সব মিলিয়ে দেশ আরও দুই সপ্তাহ বৃষ্টিহীন থাকুক- রায়পুর উপজেলার মেঘনার চরাঞ্চলের ধান ও সয়াবিন চাষিরা এটাই চান।
ঘাম ঝরিয়ে ফলানো ফসল ঘরে তুলতে না হয় আরেকটু বেশি ঘাম ঝরাবেন। তবু যেন বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি এসে ফসলের কোনো ক্ষতি না করে- এ কামনা কৃষকদের।
এদিকে খরতাপ উপেক্ষা করেই মাঠে ধান কাটছেন কৃষকরা। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন তারা। তীব্র রোদ, ভ্যাপসা গরম কিছুই তাদের কাজে ব্যাঘাত ঘটাতে পারছে না। কারণ গরমের চেয়ে খেতের সোনালি ফসল অতি মূল্যবান।
রায়পুর উপজেলার খেতজুড়ে এখন সোনালি ফসল। বোরো ধান কাটার ধুম পড়েছে। কোনো কোনো কৃষকের ধান পেকে গেছে, কিছু খেতের ধান আধপাকা অবস্থা।
সব মিলিয়ে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মাঠের ধান গোলায় তোলার সময় পাবেন কৃষকরা। সেই সঙ্গে রায়পুরে সয়াল্যান্ডে আছে সয়াবিনও। মাঠের বেশিরভাগ সয়াবিন পেকে গেছে। ধানের পাশাপাশি পাকা সয়াবিন কাটা শুরু করেছেন কৃষকরা। ধান এবং সয়াবিন কাটা থেকে শুরু করে শুকিয়ে গোলায় তোলা পর্যন্ত প্রয়োজন পড়ে রোদের।
কৃষকরা জানিয়েছেন- রোদ আর গরম যত বেশিই হোক, ফসল ঘরে তোলার এখনই মোক্ষম সময়। সেই সঙ্গে গো-খাদ্যের জন্য ধানের খড়ও তারা শুকাতে পারছেন এ রোদে।
চরকাছিয়া গ্রামের কৃষক মাহমুদ আলি প্রায় এক একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। জমির কিছু অংশের ধান তিনি কেটে ফেলছেন ইতোমধ্যে। তীব্র রোদ মাথায় নিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে জমি থেকে ধান কাটতে দেখা গেছে মাহমুদ আলিকে। আধপাকা ধান এখনো তার খেতে দেখা যাচ্ছে।
এ মুহূর্তে বৃষ্টির দরকার কিনা জানতে চাইলে মাহমুদ বলেন, মেঘনায় এপ্রিলে মাছ ধরা বন্ধ। তাই সবাই ধান ও সয়াবিন নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের জন্য রোদ বা গরম কোনো সমস্যাই না। এ মুহূর্তে বৃষ্টি হলে আমাদের জন্য চরম ক্ষতি। খেতে পানি জমে গেলে স্বাভাবিকভাবে ধান কাটতে পারব না। খড়ও শুকাতে পারব না। ধান এবং খড় শুকানোর জন্য কড়া রোদের প্রয়োজন, যা এ মুহূর্তের জন্য একেবারে উপযোগী।
কৃষক আবদুল আলিম বলেন, খেতে আধাপাকা ধান আছে। এ মুহূর্তে যদি বৃষ্টি হয়, কিছু ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর খেতে পানি জমলে ধান কাটতে ভোগান্তি হবে। মাঠে ধান রাখা যাবে না। সবমিলিয়ে ধান ঘরে তুলতে হলে বাড়তি খরচ হবে। তাই এ আবহাওয়া কৃষকদের জন্য উপযোগী।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলাতে ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান এবং ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে সয়াবিনের আবাদ হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সদ্য বিদায়ী উপপরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, আরও ১০-২২ দিন আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে মাঠ থেকে সয়াবিন তুলতে পারবেন কৃষকরা। এছাড়া বোরো ধান কাটার জন্য এখন উপযুক্ত সময়। তীব্র খরতাপেও কৃষকরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। কৃষকদের স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে কাজ করতে হবে। মাঠে কাজের সময় প্রচুর পরিমাণে পানি ও লবণ পানি পান করতে হবে। বিশেষ করে স্যালাইন মিশ্রিত পানি পান করার পরামর্শ দেব৷
রোদে কাজ করার সময় ফুলহাতা পোশাক ও মাথায় টুপি রাখার পরামর্শ দেন কৃষি কর্মকর্তা।