News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/LB
আজ ১ আগস্ট। আজ থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির শোকের মাস। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী, মহীয়সী নারী বেগম ফজিলাতুন নেছা, বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের তিন ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ও নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। সেই হত্যাযজ্ঞের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের আরো অনেকে।
এরপর একটা দীর্ঘ সময় দেশ চলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর জীবনের একটি দীর্ঘ সময় কেটেছে পাকিস্তানের কারাগারে। পাকিস্তানি শোষণ-শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতিকে জাগিয়ে তুলেছিলেন।
দেশকে স্বাধীন করেছিলেন। বাঙালি জাতিকে নিয়ে, দেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চোখে একটি সোনালি স্বপ্ন ছিল। পুরো বাংলাদেশটার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তাঁর সেই স্বপ্ন সফল হলে বাংলাদেশ হতো সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার চেয়েও উন্নত ও পরিচ্ছন্ন একটি দেশ।
১৫ আগস্টের নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড সংঘটিত না হলে আজকের বাংলাদেশের বিপর্যস্ত চেহারা দেখতে হতো না। শোষণ ও অপশাসন থেকে মুক্তি পেত দেশ। বাংলাদেশ হতো দুর্নীতিমুক্ত ও জনকল্যাণমূলক একটি রাষ্ট্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে বহু ধরনের ষড়যন্ত্র ও প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে ঠিকই সোনার বাংলা অর্জনের পথেই হাঁটছিলেন। তিনি অল্প সময়েই সংবিধান প্রণয়ন করেছেন।
প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও শিক্ষা কমিশন গঠন তাঁর কৃতিত্ব। তিনি স্থাপন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। কৃষি ও শিল্পের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে।
আজ শোকের মাসের শুরুতেই আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে আরো আন্তরিক ও তৎপর হতে হবে। বঙ্গবন্ধু শুধু একজন ব্যক্তি নন, তিনি একটি দর্শন ও একটি আদর্শের নাম। বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-দর্শন আমাদের নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। রাজনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্রনীতিতে ভয়াবহ অবক্ষয় দূর করাই এখন আমাদের প্রধান কাজ। নতুন প্রজন্মের কাছে পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রব্যবস্থার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। যদিও অতিমারি, যুদ্ধবিবাদ নানা কারণে আমাদের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে, তবু বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। স্বল্পোন্নত থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উঠে এসেছে। উন্নত দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। এ জন্য যেমন সুপরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে, তেমনি দেশে একটি ভারসাম্যপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থার প্রয়োজন হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, শিক্ষা ও প্রেরণাকে কাজে লাগাতে হবে। দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যকে এগিয়ে নিতে হবে। তাই আজ আমাদের নতুন করে শপথ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে নতুন প্রজন্মের কাছে। এই শোকের মাস থেকেই শুরু হোক নতুন যাত্রা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়িত হোক।