সড়ক দখল করে শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে গণপরিবহন চলাচলে সংকট তৈরি হয়েছে। এতে করে বাসের ব্যবসায় ধস নেমেছে। আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন পরিবহন মালিকরা। তবে কাজ না থাকায় পরিবহন শ্রমিকদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে।

গত আট দিনে বাসের ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে অন্তত ১৬ কোটি টাকা। আর পরিবহন শ্রমিকদের দিনে ক্ষতি হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা।  ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সূত্র বলছে, রাজধানী ও আশপাশের শহরতলি মিলিয়ে দিনে গড়ে প্রায় পাঁচ হাজার বাস সড়কে চলাচল করে। গত আট দিনের আন্দোলনে চার হাজারের মতো বাসের দিনে চলাচল বন্ধ ছিল। বাকি বাসগুলো পথে আটকে থাকায় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ ট্রিপ সংখ্যা কমেছে। 

সমিতির দাবি, বাস না চলায় দিনে প্রতিটি বাসের অন্তত পাঁচ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে দিনে চার হাজার বাসে ক্ষতি দুই কোটি টাকা। আট দিনে ক্ষতি ১৬ কোটি টাকা। বাকি দিন যুক্ত করলে ক্ষতি আরো বাড়বে। 

গত ২ জুলাই শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সূচনা হয়। পরের দুই দিন, অর্থাৎ ৪ জুলাই পর্যন্ত বিকেলের দিকে শুধু শাহবাগ মোড় অবরোধ করে রাখা হয়। এতেও পরীবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, কাঁটাবন, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, নিউ মার্কেট, কলাবাগান, প্রেস ক্লাব, গুলিস্তান ও কাকরাইল এলাকায় এর প্রভাব পড়ে। যান চলাচলে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টা অচলাবস্থা তৈরি হয়।

দুপুরের পর বাসের ট্রিপ কমে যায়। তিন ট্রিপের জায়গায় একটি ট্রিপ চালাতে পেরেছেন বাসচালকরা। 

গত ৭ জুলাই থেকে 'বাংলা ব্লকেড' ঘোষণা দিয়ে সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। গত ১১ জুলাই পর্যন্ত এই অবস্থা চলমান ছিল। এর মধ্যে বাস চলাচল দিনের বেলা অনেকটা বন্ধ ছিল। সন্ধ্যার পরও সড়কে তুলনামূলক বাস কম দেখা গেছে।

পরিবহন মালিক সমিতির শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই আন্দোলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করলে তাদের কী ক্ষতি। রাস্তা দখল করে জনভোগান্তি তৈরি না করলে কি আন্দোলন সফল হবে না? সবাই শুধু বাসের দোষ দেখে, বাস মালিকদের খারাপ দিন দেখে না। আমাদের ব্যাংকের ঋণের সুদ তো থেমে নেই, সেই টাকা কে দেবে?’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেন, ‘মালিকের চেয়ে শ্রমিকের ক্ষতি বেশি। মালিকরা চালকের কাছে দৈনিক জমায় বাস ভাড়া দিয়ে দেন। সেই টাকা চালককেই দিতে হয়। এখন একটা বাস পাঁচ ঘণ্টা সিগন্যালে বসে থাকলে মালিকের কিছু যায়-আসে না। ক্ষতি যা হওয়ার চালকের হয়।’ 

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগ। এতে বলা হয়, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধে পরিবহন চলাচলে ব্যাহত হচ্ছে। যার ফলে শ্রমিকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সারা দেশে ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিক রয়েছে। দৈনিক তাদের এক হাজার করে মজুরি ধরা হলে দিনে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, পরিবহন শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সুবিধা নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিরা দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে এবং নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করে সরকারের কাঁধে দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী সহিংসতা পরিহার করার জন্য আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের হিসাব অনুযায়ী, দিনে যদি আট ঘণ্টা যান চলাচল ব্যাহত হয়, তাহলে গড়ে প্রতি কর্মঘণ্টার জন্য প্রায় ১৫ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। সে হিসাবে আট দিনে আট ঘণ্টা করে ধরলে প্রায় ৯৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হবে। 

হাদিউজ্জামান বলেন, এই হিসাব চূড়ান্ত নয়। এর সঙ্গে আরো অনেক কিছু যুক্ত করার সুযোগ আছে। সঠিক সংখ্যার জন্য প্রতিটি খাত আলাদা করে হিসাব করা প্রয়োজন।