News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/Bt
বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ গবেষণা। উচ্চশিক্ষার মান বাড়াতেও গবেষণা অন্যতম পূর্বশর্ত। বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গবেষণা খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যেন ঠিক উল্টো। ১০৪ বছর পেরোনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ গবেষণায় ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অথচ বাঙালির সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিকসহ প্রতিটি অর্জনের পেছনে অনন্য ভূমিকা রাখা দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এ অবস্থায় আজ সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পালন করা হচ্ছে ১০৪তম প্রতিষ্ঠা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ এই যাত্রায় শিক্ষার মান ও গবেষণায় বিশ্ববিদ্যালয়টি তার কাঙ্ক্ষিত মানে যেতে পেরেছে কি না, তা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন তুলছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁরা বলছেন, বিশ্বের নামি-দামি যত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে তারা প্রত্যেক বছর গবেষণার পেছনে শত শত, এমনকি কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে। তবে এই ফান্ড সরকার থেকে দেওয়া হয় না। তারা একাডেমিক-ইন্ডাস্ট্রিজ সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন বেসরকারি ইন্ডাস্ট্রি থেকে তা জোগাড় করে।
অথচ প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো গবেষণার জন্য সরকারের বরাদ্দের দিকেই তাকিয়ে থাকে। ফলে মাত্র তিন দশক আগে যাত্রা শুরু করা অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে গবেষণা ও প্রকাশনায় এগিয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে গবেষণায় সবচেয়ে বেশি ব্যয় করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। ওই বছর তাদের গবেষণা ব্যয় ছিল ৫৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। অন্যদিকে ওই বছর ৩৬ হাজার শিক্ষার্থী ও দুই হাজার ২৯৯ জন শিক্ষকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় ব্যয় ছিল মাত্র ১৫ কোটি টাকা।
এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি পাঁচ লাখ টাকা। আর চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ করা হয়েছে ২০ কোটি পাঁচ লাখ টাকা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, বাংলাদেশের যত কিছু শুভ, যত কিছু কল্যাণকর, সব কিছুর সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্ব জড়িত। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার বিষয়ে বলা হচ্ছে। গবেষণার জন্য ফান্ডিংয়ের একটা বিষয় আছে। সরকার যদি ফান্ডিং না দেয় তাহলে কিভাবে গবেষণা হবে? সরকারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সাফল্য ও সক্ষমতা সেটার সদ্ব্যবহার করা উচিত৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনভেস্টমেন্ট বাড়ালে জাতি উপকৃত হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভালো থাকলে বাংলাদেশ ভালো থাকবে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ এশিয়া ইউনিভার্সিটি র্যাংকিং-২০২৪ প্রকাশ করেছে। ওই তালিকার সেরা ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোনো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। এমনকি শতবর্ষ পেরোনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই, যা ভাবিয়ে তুলেছে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।
র্যাংকিংয়ের তালিকা অনুযায়ী, এশিয়া র্যাংকিংয়ে ৩০১ থেকে ৩৫০-এর মধ্যে যৌথভাবে রয়েছে বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। তালিকার ৩৫১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। ৪০১ থেকে ৫০০-এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আর ৫০১ থেকে ৬০০-এর মধ্যে আছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়; যেমন—প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সুনাম, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত, শিক্ষকপ্রতি সাইটেশনের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষকের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি। প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম মূলত গবেষণার ওপর নির্ভর করে। অথচ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১০৪ বছর তারা কেন এখনো গবেষণা ও সুনামে পিছিয়ে থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত গবেষণার প্রবণতা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের ৫৮৬টি গবেষণা-প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল, যা ২০২৩ সালে বেড়ে হয়েছে এক হাজার ৪০০। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমের এ অগ্রগতি বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে ক্রমাগত উন্নতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এ বছর ‘কিউএস র্যাংকিংয়ে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রথমবারের মতো বিশ্বে ৫৫৪তম অবস্থান অর্জন করেছে। র্যাংকিংয়ের কিছু কিছু সূচক উন্নয়নশীল দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অর্জন করা দুরূহ।
অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল আরো বলেন, ‘আমাদের গবেষণা ও উদ্ভাবনে আরো ভালো করা সম্ভব। মানসম্মত গবেষণার জন্য প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মানের বাজেট, সমৃদ্ধ ল্যাবসহ সার্বিক সুযোগ-সুবিধা। এ ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সবার সম্মিলিত সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। র্যাংকিংয়ে আরো উন্নতি করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য একটি সেল গঠন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ইন্ডাস্ট্রি-ইউনিভার্সিটি কোলাবরেশন জোরদার করা এবং কনসালটেনসি ও গবেষণার ক্ষেত্রে আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’