News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/su
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ মার্কিন প্রস্তাবিত ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনাকে সমর্থন করার পক্ষে ভোট দিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদের ১৫ সদস্যের মধ্যে ১৪ জন মার্কিন খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। তবে রাশিয়া ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল।
প্রস্তাবে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের মুক্তি, মৃত জিম্মিদের দেহাবশেষ ফেরত এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ের শর্ত দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে এবং হামাসকেও এতে সম্মত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদ ৩১ মে রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের পেশ করা তিন অংশের পরিকল্পনাকে সমর্থন করেছে। এর অর্থ বিশ্বের ধনী দেশগুলো নিয়ে জি৭ গ্রুপের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি সরকারের সঙ্গেও তারা যোগ দিয়েছে। ভোটের ফলে দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে পরিকল্পনায় ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানাতে উভয় পক্ষের ওপর চাপ বাড়বে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন শান্তিচুক্তির জন্য সমর্থন গড়ে তোলার প্রয়াসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ বিদেশি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং এর পরেই পরিকল্পনাকে সমর্থন করে ভোট দিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘের ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে ব্লিনকেন বলেছিলেন, এই অঞ্চলের নেতাদের কাছে তার বার্তা হলো, ‘আপনি যদি যুদ্ধবিরতি চান তবে হামাসকে হ্যাঁ বলার জন্য চাপ দিন।’
এদিকে ফিলিস্তিনের হামাসগোষ্ঠী সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। তবে হামাস সম্ভবত গাজা উপত্যকা থেকে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের পরিকল্পনার দিকে নিয়ে যাওয়ার গ্যারান্টি দাবি করবে।
মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের মতে, দোহার রাজনৈতিক নেতৃত্ব এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। এদিকে নেতানিয়াহু এখনো মার্কিন প্রস্তাবকে সমর্থন করেননি।
বাইডেন যখন এই শান্তি উদ্যোগটিকে ইসরায়েলি হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটা জানত যে ইসরায়েলের নিজস্ব শাসক জোটের মধ্যে এই পরিকল্পনা নিয়ে অনিচ্ছা থাকবে। এই চুক্তি কিছু উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রীদের অনিচ্ছ সত্ত্বেও অগ্রসর হলে সরকার পতনের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দেবে। এদিকে গত রবিবার ইসরায়েলি যুদ্ধ মন্ত্রিসভা থেকে সাবেক জেনারেল বেনি গ্যান্টজের পদত্যাগ সেই অস্থিরতা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক পোস্টে লিখেছেন, ‘হামাস বলেছে তারা যুদ্ধবিরতি চায়। এই চুক্তি সেই চাওয়াকে প্রমাণ করার একটি সুযোগ, যদি তারা এটি মানে।’
জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস-গ্রিনফিল্ড বলেছেন, ‘আজ আমরা শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছি।’
যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড গাজার পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, ‘দুর্ভোগ অনেক দীর্ঘ সময় ধরে চলছে। আমরা পক্ষগুলোকে এই সুযোগটি কাজে লাগাতে এবং স্থায়ী শান্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানাই। যা ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি উভয় জনগণের জন্য নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা দেবে।’ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ক্যামেরনও এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন।
গত ২৫ মার্চ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছিল। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর আগে এ ধরনের পদক্ষেপে ভেটো দিয়েছিল। নেতানিয়াহু সে সময় বলেছিলেন, মার্কিন জিম্মিদের মুক্তির সঙ্গে যুদ্ধবিরতিকে যুক্ত করার পূর্বের অবস্থান তিনি ত্যাগ করেছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রস্তাবে তিনটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রথম ধাপে বন্দি বিনিময়ের পাশাপাশি স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতি হবে। দ্বিতীয় ধাপে ‘শত্রুতার স্থায়ীভাবে অবসান’ এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।
তৃতীয় ধাপে যুদ্ধের কারণে ব্যাপকভাবে ধ্বংস হওয়া গাজার জন্য বহু বছরের পুনর্গঠন পরিকল্পনা রয়েছে। অবশ্য নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া যুদ্ধবিরতির এই প্রস্তাব নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ইসরায়েল।
গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। আজ মঙ্গলবার গাজা শহরের একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্টে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই শিশু এবং এই হামলায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।