News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/so
চট্টগ্রামের পটিয়ায় মহাসড়কে সিএনজি স্টেশনে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই চেয়ারম্যান সমর্থকদের মধ্যে ঘটে যাওয়া গোলাগুলি বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আবার যেকোনো সময় ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এসময় অস্ত্র হাতে জঙ্গল খাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজের অনুসারী এনাম নামের এক যুবকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়।
রবিবার (৯ জুন) বিকেলে পটিয়া-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের মনসা বাদামতল এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সিএনজি অটোরিকশায় চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণের আধিপত্য ধরে রাখতে এ সংঘর্ষ হয়। এতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার পাশাপাশি গোলাগুলি ও আশপাশের বিভিন্ন বসতঘরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় অস্ত্র হাতে থাকা এনাম নামের এ যুবকের ছবিটি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, সংঘর্ষের ঘটনায় অস্ত্র হাতে ভাইরাল হওয়া ছবিটি পটিয়া উপজেলার জঙ্গল খাইন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজের অনুসারী এনামের।
তার গ্রামের বাড়িও একই এলাকায় বলে জানা গেছে। তার সঙ্গে এসময় ধারাল অস্ত্র হাতে ছিলেন এরশাদ, আলমগীর, গাজী মনির, সুমন ও এরফান।
স্থানীয়রা বলেন, মনসা বাদামতল এলাকায় সিএনজি স্টেশন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জেরে রবিবার বিকালে স্থানীয় অঘোষিত সিএনজি সমিতির সভাপতি চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির কুমারের অনুসারী মো. ফোরকানের সঙ্গে চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সবুজের অনুসারী মহিউদ্দিন ও এরফানের মারধরের ঘটনা ঘটে।
এসময় ফেরকানকে মারধরের খবর পেয়ে তার লোকজন ঘটনাস্থল বাদামতল মোড়ে এলে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ ও বেশ কয়েকটি বসতঘরে হামলা চালিয়ে জানালার গ্লাস ও টিনের দরজা ভাঙচুর করা হয়।
এদিকে, পটিয়ায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা অবৈধ সিএনজি স্টেশন ও অঘোষিত কমিটির কারণে প্রায় সময় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে নানা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব সিএনজি স্টেশনে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে হাজার হাজার সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে সড়ক মহাসড়কে। এসব গাড়ি থেকে প্রতিদিন টোকেনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক চাঁদা আদায় করছেন কমিটির নেতারা।
এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে দৈনিক ২০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে নিয়ন্ত্রকরা। এতে প্রতি মাসে বড় অঙ্কের বাণিজ্য হয়। এ চাঁদার টাকার ভাগবাটোয়ারা নিয়ে প্রায় সময় ঘটছে এ সংঘর্ষের ঘটনা। গত বছরের ৩০ জানুয়ারি পটিয়া পৌর সদরের ডাকবাংলো মোড় এলাকায় সিএনজি পার্কিংয়ের ইজারাদার আবদুল মান্নান ও সিএনজি চালক ওমর আলীর কাছ থেকে সিএনজি পার্কিংয়ের নির্ধারিত ১০ টাকা পার্কিং ফি আদায় করা নিয়ে উভয়ের মাঝে বাগবিতণ্ডা হয়। এসময় ওমর আলীর ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার সোহেল তার দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে আবদুল মান্নানের ওপর এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করেন। টানা পাঁচ দিন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান মান্নান।
স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা সমিতির সভাপতি ফোরকান বলেন, সবুজ চেয়ারম্যানের অনুসারী মহিউদ্দিন সিএনজির চালক বা মালিক না হয়েও দীর্ঘদিন ধরে সমিতি নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। সমিতির নামে প্রত্যেক সিএনজি থেকে দীর্ঘদিন ধরে সে তাহের নামের এক চালককে দিয়ে চাঁদা তুলে আসছিল। এ চাঁদা থেকে বাদামতল মোড়ে একটি মসজিদ পরিচালনা করা হলেও দীর্ঘদিন ধরে এর কোনো হিসাব নেই। আমাকে সম্প্রতি সমিতির সদস্যরা সভাপতি করে নতুন কমিটি গঠন করলে মহিউদ্দিন আমার বিরুদ্ধে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছিল। এর জেরে মহিউদ্দিন ও তার ভাই এরফান রবিবার সকাল ১১টার দিকে বাদামতল এলাকায় আমাকে মারধর করে।
হাবিলাসদ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান ফৌজুল কবির কুমার বলেন, সিএনজি সমিতির নামে চাঁদা তুলা হলে সেটা সমিতির কল্যাণে ব্যয় হবে। তারা মসজিদ পরিচালনা করুক, যাই করুক এটি তাদের ব্যাপার। বাইরের লোক কেন সিএনজি সমিতি থেকে চাঁদা তুলবে। সমিতির সভাপতি ফোরকান। সমিতির দেখভাল সমিতির লোকজন করবে। এ নিয়ে বিরোধের জেরে আমার চাচাতো ভাই ফোরকানকে মহিউদ্দিন ও তার ভাই এরফান মারধর করেছে এ কারণে এলাকার লোকজন তার প্রতিবাদ করতে আসলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পটিয়া থানার ওসি জসীম উদ্দীন বলেন, সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে চাঁদাবাজির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কেউ সোমবার রাত পর্যন্ত থানায় মামলা করেনি। ওই ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অস্ত্র হাতে থাকা যুবকের ছবি ছবিটি আমার নজরে এসেছে। তাকে গ্রেপ্তারে আমাদের অভিযান শুরু হয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব।