ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা আগামী ১৮ নভেম্বর প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরীর সই করা মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ নভেম্বর। এরপর ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত থাকবে দাবি-আপত্তি ও সংশোধনের আবেদন গ্রহণের সময়। এসব দাবি ও আপত্তির নিষ্পত্তি হবে ১৭ নভেম্বর। পরদিন ১৮ নভেম্বর প্রকাশ করা হবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা।
বর্তমানে দেশের মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৬৩ লাখ ৭ হাজার ৫৯৪ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪১ লাখ ৪৫৫ জন, নারী ভোটার ৬ কোটি ২২ লাখ ৫ হাজার ৮১৯ জন এবং হিজড়া ভোটার আছেন ১,২৩০ জন।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্ভুল ভোটার তালিকা তৈরিতে কাজ করছে ইসি। ভোটার তালিকা সংশোধনের জন্য মাঠপর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে এবং নাগরিকদের সংশোধন বা নতুন নিবন্ধনের জন্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আবেদন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এরই মধ্যে ‘Postal Vote BD’ নামে একটি অনলাইন অ্যাপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। এ অ্যাপের মাধ্যমে প্রবাসীরা অনলাইনে নিবন্ধন করে ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) থেকে তথ্য নিয়ে দেখেছে, অন্তত ৪০টি দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে বলে ইসির ধারণা।
এর মধ্যে সৌদি আরবেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি — প্রায় ৪০ লাখ ৫০ হাজার প্রবাসী, আর সবচেয়ে কম নিউজিল্যান্ডে — মাত্র ২ হাজার ৫০০ জন।
ইসি’র লক্ষ্য, এনআইডি-ধারী প্রবাসীদের মধ্যে অন্তত ৫০ লাখকে ভোটদানে সম্পৃক্ত করা। এজন্য ব্যালট ছাপানো, ডাকযোগে প্রেরণ, প্রচারণা এবং অ্যাপ নির্মাণসহ প্রযুক্তিগত খাতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “প্রতি ভোটারের জন্য গড়ে ৭০০ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। এক লাখ ভোটারের জন্য খরচ হবে প্রায় ৭ কোটি টাকা। এই অর্থ ব্যালট প্রস্তুত, ডাকযোগে প্রেরণ, ট্র্যাকিং ও প্রযুক্তি সহায়তায় ব্যয় হবে।”
📱 Postal Vote BD: কীভাবে ভোট দেবেন প্রবাসীরা?
নভেম্বর মাসে ‘Postal Vote BD’ অ্যাপ চালু হবে। প্রবাসীরা ওই অ্যাপে গিয়ে নিজের এনআইডি নম্বর, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করবেন। নিবন্ধনের পর:
০১) নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট আসনের ব্যালট ছাপানো হবে।
০২) ব্যালটে শুধু প্রতীক থাকবে, কোনো প্রার্থীর নাম থাকবে না।
০৩) ডাক বিভাগের মাধ্যমে প্রবাসীর ঠিকানায় **ব্যালটসহ খাম পাঠানো হবে।
০৪) প্রবাসী ভোটার ব্যালটে পছন্দের প্রতীকে টিক দিয়ে খামে ভরে রিটার্নিং কর্মকর্তার ঠিকানায় ডাকযোগে পাঠাবেন।
০৫) সেই ভোট জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে জমা থাকবে এবং ভোটের দিন গণনায় যুক্ত হবে।
ডাক বিভাগ জানিয়েছে, দূরবর্তী দেশে এক চিঠি পাঠাতে ও ফেরত আনতে গড়ে ২৮ দিন সময় লাগে। এজন্য দেশে ভোটের আগে প্রবাসীদের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে হবে। ইসি সচিব জানান, “যেহেতু সময় কম, তাই ব্যালটে প্রার্থীর নাম ছাপানোর সুযোগ নেই। বরং প্রতীক থাকবে। প্রার্থীর নামের তালিকা ভোটারকে এসএমএস করে জানানো হবে।”
শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্রধারী প্রবাসীরা এই সুযোগ পাবেন। যারা এখনও ভোটার হননি, তারা দূতাবাসে গিয়ে বা নির্ধারিত নিবন্ধন কেন্দ্রে ফরম-২ (ক) সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভোটার হতে পারবেন। প্রয়োজনীয় নথি:
০১) বাংলাদেশি পাসপোর্ট
০২) অনলাইন জন্ম নিবন্ধন
০৩) ৩ জন এনআইডি-ধারী নাগরিকের প্রত্যয়ন
০৪) পাসপোর্ট সাইজ ছবি
* (চট্টগ্রাম অঞ্চলের জন্য অতিরিক্ত কিছু নথি যেমন: শিক্ষা সনদ, বাবা-মার এনআইডি, নিকাহনামা, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি)
বর্তমানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপান—এই ১০টি দেশে ১৭টি দূতাবাসে ভোটার নিবন্ধন চলছে। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও চারটি দেশে চালু হবে। ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর জানান, “এ পর্যন্ত প্রায় ৫৫ হাজার আবেদন এসেছে। এর মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি প্রবাসী দশ আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন।”
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করে পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি গ্রহণে একমত হয়েছে কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন আহমদ বলেছেন, “এটি একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ। সীমিত পরিসরে হলেও আমরা এবারের জাতীয় নির্বাচনে এটি বাস্তবায়ন করবো।”
প্রবাসীদের পাশাপাশি ৭১টি জেলের কয়েদি এবং নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মচারীরাও পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
‘রেমিট্যান্স যোদ্ধারা এখন ভোটযোদ্ধা’: এ উদ্যোগকে রেমিট্যান্স নির্ভর অর্থনীতির জন্য একটি মূল্যবান পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, "যারা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখেন, এবার তারাই দেশের গণতন্ত্রের অংশ হতে যাচ্ছেন—এটা গর্বের বিষয়।"