লোকসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী, লালনসাধনার অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব ফরিদা পারভীন আর নেই। আজ শনিবার রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর।
হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী তার মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতাসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন এই বরেণ্য শিল্পী। চলতি মাসের ২ তারিখ ডায়ালাইসিসের পর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। এরপর গত বুধবার বিকেলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তখন থেকে তার রক্তচাপ ছিল আশঙ্কাজনকভাবে কম এবং সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও কমে যায়।
ফরিদা পারভীনের মৃত্যুতে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক শোকবার্তায় বলেন, "তার প্রয়াণে দেশের সংগীতাঙ্গন এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হলো। লালনগীতি এবং বাংলার গান তিনি সযত্নে ধারণ ও প্রচার করেছেন। তার কণ্ঠে লালনের গান শুধু সুরেলা আবেগেই ভাসায়নি, আমাদের সংস্কৃতির অন্তর্লীন দর্শন ও জীবনবোধকেও নতুন মাত্রায় তুলে ধরেছিল।"
তিনি আরও বলেন, "তার শিল্পচর্চা প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রেরণা জুগিয়েছে। ফরিদা পারভীনের অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা তাকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।" তিনি শিল্পীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
সংগীতজীবন ও প্রাপ্ত সম্মাননা:
ফরিদা পারভীনের জন্ম ১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সে, ১৯৬৮ সালে তার পেশাদার সংগীতজীবনের শুরু হয়। নজরুলগীতি, দেশাত্মবোধক গানসহ বিভিন্ন ধাঁচের গান করলেও তিনি সর্বাধিক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন লালনগীতি গেয়ে। লালনের গানকে তিনি এক অনন্য মাত্রায় পৌঁছে দেন।
তার অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৮৭ সালে ফরিদা পারভীন একুশে পদকে ভূষিত হন। ১৯৯৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে সম্মাননা পান। এছাড়া ২০০৮ সালে তিনি জাপান সরকারের 'ফুকুওয়াকা এশিয়ান কালচার' পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি স্বামী ও চার সন্তানসহ অসংখ্য গুণমুগ্ধ শ্রোতাকে রেখে বিদায় নিলেন। ফরিদা পারভীনের সংগীত ও সাধনার স্মৃতি চিরকাল বাঙালির হৃদয়ে জাগরুক থাকবে।