News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/38e
ফেনী-বিলোনিয়া সড়কের পরশুরাম দক্ষিণ বাজারে চৌমুড়ি সংলগ্ন রাস্তার পাশে ‘ইচ্ছে মতো দামের হোটেল’। ইতোমধ্যেই পরশুরামবাসীর কাছে গরীবের হোটেল নামে পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার অসংখ্য মানুষ হোটেলে দুপুরে খাবারের জন্য ভিড় করেন। তবে দিন দিন কাস্টমার বেড়ে যাওয়া হোটেল কর্তৃপক্ষ খাবার সরবরাহ দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
১ আগস্ট থেকে চালু হওয়া ‘ইচ্ছে মতো দামের হোটেল’ এ দুপুরে খাবারে প্রতিদিন একটি তরকারি থাকে। ইচ্ছেমতো ভাত, সবজি, ডাল দিয়ে খাবার শেষে নির্ধারিত বক্সে ইচ্ছে মতো টাকা পরিশোধ করার সুযোগ রযেছে।
হোটেলের ক্যাশে কেউ না থাকলেও একটি বক্সে ইচ্ছেমতো টাকা রেখে দেন। তবে হোটেল কর্তৃপক্ষ একেক দিন একেক তরকারি রান্না করেন। সপ্তাহে একদিন ডিম, একদিন মুরগির মাংস, একদিন মাছ রান্না করেন। সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার বিরানী রান্না করেন।
হোটেল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আবুল কালাম বলেল, প্রতিদিন দেড়শ জনের জন্য খাবার রান্না করা হয়। দেড়শ জনের কাছে খাবার বিক্রি করে সর্বনিম্ন উদ্বোধনের দিন ৪০০ টাকা সর্বোচ্চ ২২০০ টাকা পেয়েছেন।
সরেজমিন গিযে দেখা যায়, দুপুর হলেই নানা জায়গা থেকে এই হোটেলে এসে বসে পড়েন ছিন্নমূল মানুষ। একবেলা ভালো পরিবেশে ভালো খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন তারা। দোয়া করেন দু’হাত তুলে হোটেল মালিকের জন্য। হোটেল মালিক বলছেন, ‘কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিনই এমন মহৎ কাজ করে যেতে চাই আমি।’
হোটেল মালিকের নাম নুর আহাম্মদ তিনি একজন সরকারি চাকুরীজীবী। তার ছেলের নাম বাবু। তাদের বাড়ি ফুলগাজী উপজেলায়।
তবে হোটেলটি পরিচালনা করেন তার ভাতিজা মীর হোসেন এবং আবুল কালাম। তারা দুজনেই নুর আহমেদের পরিবারের সদস্য। মালিক নুর আহাম্মদ এই মানবিক কাজে নিজেদের পরিচয় দিতে রাজি হননি।
হোটেল মালিক নুর আহমেদের এমন উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে সব মহলে।
ওমর ফারুক নামের একজন টমটম চালক বলেন তিনি পরশুরাম বাজারে টমটম চালান। বাড়িতে গিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই তিনি উদ্বোধনের পর থেকে এই হোটেলে দুপুরের খাবার খান। ওমর আরো বলেন তার হিসেবে প্রতিবেলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা দাম হলেও তিনি ২০ থেকে ৩০ টাকা করে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার মাংস দিয়ে খেয়ে তিনি ৩০ টাকা দিয়েছেন আজকে ডিম দিয়ে খেয়ে বিশ টাকা দিয়েছেন।
হাসপাতাল চৌমুড়ির ফল ব্যবসায়ী মো. ইয়াসিন বলেন প্রতিদিন বাড়িতে গিয়ে দুপুরের খাবার খেতে হলে তার ১০০ টাকার উপরে খরচ হয়। তিনি গত কদিন ধরে ইচ্ছেমতো দামের হোটেলে দুপুরের খাবার খাচ্ছেন এত তার অনেক উপকার হচ্ছে।
পরশুরাম উপজেলা বিআরডিবির চেয়ারম্যান আবু তালেব রিপন বলেন নিত্যপণ্যের উর্দ্ধগতিতে বিপাকে নিম্নআয়ের মানুষ। নিত্যপণ্যের বাজারের এই অবস্থায় ফুটপাতের হোটেল গুলোতে ডিম, ভর্তা, ডাল দিয়ে একবেলা খেলেও বিল হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকা। মাঝারি মানের রেস্টুরেন্টে একবেলা ভাত, মাছ কিংবা মাংস খেতে খরচ করতে হয় ১০০ থেকে তিনশ টাকা পর্যন্ত। এমন পরিস্থিতিতে পরশুরাম এই প্রথম চালু হলো ইচ্ছেমতো দামের হোটেল দুপুরের খাবার খাইয়ে ইচ্ছে মতো দাম পরিশোধ করছেন এটা পরশুরামের জন্য অকল্পনীয়।
শনিবার দুপুরে একটার দিকে ইচ্ছে মতো দামের হোটেলে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন পরিবহনের চালক, বিক্রয় প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন ক্ষুদ্র দোকান মালিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার গরীব, অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষ ইচ্ছে মত দামের হোটেলের সামনে ভিড় করছেন এবং ইচ্ছে মতো খাবার খেয়ে নির্ধারিত বক্সে ইচ্ছে মত টাকা রেখে দিচ্ছেন।
শনিবার দুপুরের খাবারের জন্য ডিম সবজি রান্না করা হলেও ডাল, ভর্তা সহ দুপুরের খাবারের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা হওয়ার কথা সেখানে বেশিরভাগ কাস্টমার ১০ টাকা সর্বোচ্চ ২০ টাকা পরিশোধ করছেন। তবে কয়েকজনকে টাকা না দিয়ে চলে যেতে দেখা যায় হোটেল কর্তৃপক্ষ বলেন কেউ টাকা দিতে অপারগ হলে তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হবে না।
ইচ্ছে মত দামের হোটেলের পরিচালক আবুল কালাম বলেন ব্যবসার উদ্দেশ্যে নয় মানুষকে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে ইচ্ছেমতো দামের হোটেল চালু করা হয়েছে। হত দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষজনের কথা চিন্তা করে তারা পরশুরামে হোটেলটি চালু করেছেন ভবিষ্যতে সেবামূলক কাজে চালিয়ে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে দোয়া ও সহযোগিতা চেয়েছেন।