News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/35X
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি অবশেষে পেল ভৌগোলিক নির্দেশক (GI) পণ্যের স্বীকৃতি। আখের রস থেকে হাতে তৈরি প্রায় আড়াই শ’ বছরের পুরনো এই লাল চিনি স্থানীয়ভাবে পিঠা, শরবত ও মিষ্টান্ন তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “২০২৪ সালের ১১ জুলাই উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করা হয়। অন্য কোনো পক্ষের দাবি না থাকায় সব প্রক্রিয়া শেষে আজ ওয়েবসাইটে স্বীকৃতির তথ্য নিশ্চিত হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আমরা সনদের জন্য চিঠি পাঠিয়েছি।”
তিনি বলেন, জিআই স্বীকৃতির ফলে ফুলবাড়িয়ার লাল চিনির পরিচিতি দেশব্যাপী এবং আন্তর্জাতিকভাবে বাড়বে। কৃষকেরা আগ্রহী হবেন বেশি আখ উৎপাদনে, যা অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার বাকতা, কালাদহ ও রাধাকানাই ইউনিয়নের প্রায় ২০টি গ্রামের কৃষকেরা লাল চিনি তৈরির সঙ্গে জড়িত। প্রতি বছর প্রায় শতকোটি টাকার লাল চিনি বিক্রি হয় এই উপজেলায়। এ বছর উৎপাদন হয়েছে প্রায় **১০৮ কোটি টাকার লাল চিনি**।
লাল চিনি তৈরির জন্য একমাত্র কাঁচামাল আখ। জমি থেকে আখ সংগ্রহ করে যন্ত্রচালিত কলে রস বের করে সাতটি লোহার কড়াইয়ে ধাপে ধাপে জ্বাল দিয়ে রস ঘন করা হয়। এরপর কাঠের মুগুর দিয়ে নাড়াচাড়া করে তৈরি হয় গুঁড়া বা গুটির মতো আকৃতির বাদামি রঙের লাল চিনি। এটি পরে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
চৈত্র মাসে আখ রোপণ শুরু হয়ে পৌষ মাসে আখমাড়াইয়ের মাধ্যমে শুরু হয় চিনি তৈরির মৌসুম। চলতি বছর উপজেলায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে, যার ৯০ শতাংশে দেশি জাত এবং বাকিতে ঈশ্বরদী-৪১ ও ঈশ্বরদী-৪২ জাতের আখ উৎপাদন হয়।
প্রাকৃতিক এই চিনির স্বাদ ও গুণমান এতটাই ভালো যে দেশ-বিদেশে এর চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। অনেক প্রবাসীও লাল চিনি নিয়ে যাচ্ছেন বিদেশে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর ইসলাম বলেন, “এই স্বীকৃতি এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে। আমরা গর্বিত যে ফুলবাড়িয়ার লাল চিনি এখন বাংলাদেশের জিআই পণ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে।”