News Link: https://dailylalsobujbd.com/news/2LX
বতলীসহ রাজধানীর বিভিন্ন কোরবানির পশুর হাট ধীরে ধীরে জমে উঠছে। ইতোমধ্যে গরুতে হাট পূর্ণ হলেও ক্রেতার উপস্থিতি এখনও তুলনামূলক কম। বিক্রেতারা আশা করছেন, ঈদের আগের শেষ দুই দিনে বেচাকেনা বাড়বে। তাছাড়া আরও গরু পথে রয়েছে, সেগুলো রাতে আসবে।
বুধবার (৪ জুন) গাবতলী পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, হাটের আয়তন এবার কিছুটা কমানো হলেও গরুর উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সকালে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকলেও বিকালে কিছুটা বেড়েছে। মাঝারি ও ছোট আকৃতির গরুতে বরাবরের মতো বেশি চাহিদা দেখা গেছে। তবে এসব গরুর দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে গড়ে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।
এদিন হাটে মাঝারি আকৃতির গরুর দাম গড়ে দেড় লাখ টাকার ওপরে চাওয়া হচ্ছে। কিছুটা বড় আকারের গরু বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে ৩ লাখ টাকায়। আর ছোট গরুর দাম হাঁকানো হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। এর নিচে কোনও গরু দেখা যাচ্ছে না। ষাঁড় গরু বাদ দিলে বলদ গরুর দাম তুলনামূলক কিছুটা কম রাখা হচ্ছে।
সিঙ্গাইর থেকে ১১টি গরু নিয়ে আসা বিক্রেতা আমজাদ হোসেন বলেন, মাঝারি সাইজের দুটি গরু ২ লাখ ৩৫ হাজার করে বিক্রি করেছি। বাকিগুলো দেড় লাখ করে ছাড়বো।
ক্রেতারা কত দাম বলছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০-২৫ হাজারের মধ্যে গরু খোঁজেন।
অন্যদিকে, কুষ্টিয়া থেকে তিনটি ছোট গরু নিয়ে আসা ওহেদুল হক জানান, প্রতিটি গরুর দাম ৯৫ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা চাচ্ছেন, তবে ক্রেতারা বলছেন ৭০-৭৫ হাজার।
তিনি বলেন, আজকেই এসেছি, আশা রাখি আগামীকাল কাস্টমার বাড়বে। আজ তো লোকই নাই।
এদিকে ক্রেতারা অভিযোগ করছেন, প্রতি বছর টাকার তুলনায় গরুর আকার কমে যাচ্ছে। তারা বলেন, গত বছর যে গরুর দাম ১ লাখ টাকা ছিল, এবার সেই গরু দেড় লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে। বাসা থেকে কোরবানির পশু কিনতে লাখ টাকার ওপরে বাজেট নিয়ে আসছেন বলে জানান ক্রেতারা।
খিলগাঁও থেকে আসা ক্রেতা রিয়াদ মাহমুদ বলেন, আজ ক্রেতা কম দেখছি। সে তুলনায় গরু বেশি। তবে খামারিরা দাম ছাড়ছে না। তারা হয়তো আগামীকাল থেকে বিক্রির আশা করছে।
দাম কেমন মনে হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাম প্রতি বছর বাড়ে। আর গরুর আকার কমে। যে বাজেট এনেছি, তার থেকে অন্তত ৫০ হাজার টাকা বেশি চাচ্ছে।
ধানমন্ডি লেক সার্কেল থেকে আসা ক্রেতা শফিক আলম বলেন, মনে হচ্ছে না আজ তারা (বিক্রেতা) গরু ছাড়বে। সকাল ৯টা থেকে ঘুরছি, কিন্তু দামে গরু পাচ্ছি না।
কীরকম বাজেটের গরু খুঁজছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার চিন্তা করেই এসেছি দেড় লাখ টাকার নিচে কোনও গরু পাওয়া যাবে না পছন্দ সই। তাই সে রকমই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি।
গরু কিনে নিয়ে যাওয়া মিরপুর ৬০-এর বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, দাম চাচ্ছে ভালো। বেশিও না কমও না। বর্তমান বাজার তুলনায় ঠিকই মনে হচ্ছে। তবে পরামর্শ থাকবে, ক্রেতারা যেন দেড় লাখের নিচে কোনও বাজেট না আনেন। অন্তত এক বিশের ওপরে যেতে হবে। তাহলে চোখে লাগার মতো গরু নিয়ে যেতে পারবে।
রাজধানীর যেসব স্থানে হাট বসছে
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন স্থায়ী পশুর হাট হিসেবে গাবতলীতেই কোরবানির পশু কেনাবেচা হবে। এর বাইরে অস্থায়ীভাবে যেসব স্থানে পশুর হাট বসবে তার মধ্যে রয়েছে, খিলক্ষেত থানার ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন খালি জায়গা, তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাশের খালি জায়গা, উত্তরা দিয়াবাড়ির ১৬ ও ১৮ নম্বর সেক্টরের মাঝামাঝি বউ বাজারের পাশে খালি জায়গা, মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের ইস্টার্ন হাউজিংয়ের খালি জায়গা এবং মোহাম্মদপুরের বছিলা ৪০ ফুট সড়কের পাশের খালি জায়গা। এছাড়া উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের রানাভোলা অ্যাভিনিউ সংলগ্ন খালি জায়গা, ভাটারার সুতিভোলা খালের পাড়, খিলক্ষেত এলাকার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নিচের জায়গা, কাচকুড়া বাজার সংলগ্ন রহমাননগর এলাকা, মেরুল বাড্ডার কাঁচাবাজার এবং রামপুরার পূর্ব হাজিপাড়ায় ইকরা মাদ্রাসার পাশে খালি জায়গায় অস্থায়ী পশুর হাট বসবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন স্থায়ী হাট বসবে সারুলিয়ায়। পাশাপাশি বেশ কয়েকটি স্থানে অস্থায়ী পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে–উত্তর শাহজাহানপুরে মৈত্রী সংঘ ক্লাবের খালি জায়গা, ডেমরার আমুলিয়া এলাকায় আলীগড় মডেল কলেজের উত্তর পাশে খালি মাঠ, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটের পশ্চিম পাশের নদীপাড়, দনিয়া ক্লাবের পূর্ব পাশে ও ছনটেক মহিলা মাদ্রাসার পাশের খালি জায়গা। এছাড়া লালবাগের পোস্তা এলাকায় রহমতগঞ্জ ক্লাবের পাশে এবং হাজারীবাগে ইনস্টিটিউট অব লেদার টেকনোলজি কলেজের পূর্ব পাশের খালি জায়গাতেও কোরবানির পশুর অস্থায়ী হাট বসবে।
এছাড়াও ঢাকা উত্তরে মিরপুর কালশী বালুমাঠ এবং ঢাকা দক্ষিণে নারিন্দায় সাদেক হোসেন খোকা মাঠের দক্ষিণ পাশের খালি জায়গা ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালে হাট বসার কথা রয়েছে।