News Link: http://dailylalsobujbd.com/news/3au
খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে ডাকা অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা। শনিবার (৪ অক্টোবর) সকালে সংগঠনটির মিডিয়া সেলের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শহীদদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুণ্যকর্ম সম্পাদন, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মানবিক সহায়তা প্রদান এবং প্রশাসনের আশ্বাসকে আংশিক বিবেচনায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
এর আগে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরের এক মারমা কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ঘটনার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পার্বত্য জনপদ। জুম্ম ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিচারের দাবিতে অর্ধদিবসের সড়ক অবরোধ থেকে শুরু করে দ্বিতীয় দফায় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা করা হয়।
২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। গুইমারায় ভয়াবহ সহিংসতায় দুষ্কৃতিকারীদের গুলিতে প্রাণ হারান তিনজন পাহাড়ি যুবক। আহত হন সেনাবাহিনীর মেজরসহ ১৩ সেনা সদস্য, পুলিশ ও সাধারণ মানুষ। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরির বাড়িসহ বহু স্থাপনা আগুনে ভস্মীভূত হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসক খাগড়াছড়ি পৌর এলাকা ও সদর উপজেলায় এবং গুইমারায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। তবুও সংঘর্ষ ও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোতেও।
সৃষ্ট উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ২৯ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সার্কিট হাউসে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমার সঙ্গে বৈঠকে বসেন জুম্ম ছাত্র-জনতার ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল। উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।
আন্দোলনকারীদের উত্থাপিত আট দফা দাবি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন উপদেষ্টা। এরই প্রেক্ষিতে দুর্গাপূজা ও আলোচনার অগ্রগতির বিষয় বিবেচনায় ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করা হয়।
সহিংসতার ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত হয়েছে পাঁচ সদস্যের কমিটি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জেলা প্রশাসন ও পরিষদের পক্ষ থেকে নগদ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
তবে ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি। মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট অনুযায়ী, ধর্ষণের প্রমাণ মেলেনি ওই কিশোরীর শরীরে। অন্যদিকে সহিংস ঘটনায় গুইমারা ও খাগড়াছড়ি থানায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করেছে, যেখানে ১,০০০-এর বেশি অজ্ঞাত আসামির নাম রয়েছে।
অবরোধ প্রত্যাহারের ঘোষনায় দীর্ঘ কয়েকদিনের অচলাবস্থার পর অবরোধ প্রত্যাহারে স্বস্তি ফিরছে খাগড়াছড়ি জেলায়। তবে অভিযোগ, সহিংসতা, তদন্ত ও মামলার বিষয়গুলো এখনো অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। পাহাড়ে স্থায়ী শান্তির জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সচেতন মহল।